বাতিল, ফেলে-দেওয়া বই নিয়েই তৈরি লাইব্রেরি; অভিনব উদ্যোগ তুরস্কের সাফাইকর্মীদের

‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’। এই প্রবাদ বাক্যটাই যেন সত্যি হয়ে গেছে তুরস্কে। পারতপক্ষে তাঁদের কাজই ছিল এই ছাই উড়িয়ে দেখাই। আর সেখান থেকেই তাঁরা খুঁজে পেয়েছিলেন মণি-মাণিক্য। তাঁরা বলতে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার সাফাইকর্মীরা। শহরের জঞ্জাল পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রায়শই তাঁরা খুঁজে পেতেন ফেলে দেওয়া বাতিল বইপত্র। আর সেসব দিয়ে বছর কয়েক আগে গড়ে উঠেছিল সম্পূর্ণ একটি লাইব্রেরি।

প্রাথমিকভাবে এইধরণের বই খুঁজে পেলে উৎসাহী সাফাইকর্মীরা নিজেরাই বাড়ি নিয়ে যেতেন সেসব। তবে তুরস্কের মতো দেশ, যে ইউরোপ আর এশিয়ার মধ্যে সংযোগ হয়ে দাঁড়িয়ে তার জঞ্জালের পরিমাণ তো নেহাত কম না! ফলে বইয়ের সংখ্যাও খুব কিছু কম ছিল না। শেষ অবধি সাফাইকর্মীদের সংগঠন থেকেই উঠে এসেছিল লাইব্রেরি স্থাপনের কথা। হয়েওছিল তেমনটাই। বছরখানেকের মধ্যেই সংগ্রহের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৬ হাজারে। 

তবে কর্মীদের এই উদ্যোগ দেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসেন শহরের মানুষও। নিজেদের সংগ্রহের অযাচিত বই-ও তাঁরা লাইব্রেরি দান করতে থাকেন। আরও দ্রুত যেন বাড়তে থাকে বই ভাণ্ডার। বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২৫ হাজার। রয়েছে ১৭টি আলাদা আলাদা বইয়ের বিভাগ। এক কথায় যেন ‘বই-সর্গিক’। 

প্রাথমিকভাবে উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র সাফাইকর্মী এবং তাঁদের পরিবারের আত্মীয়রাই ব্যবহার করবেন লাইব্রেরিটি। তবে পরবর্তীকালে তা সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন তাঁরা নিজেরাই। 

বছর দুয়েক আগে থেকে বইয়ের সাহায্য চেয়ে এই লাইব্রেরির কাছেই দ্বারস্থ হয়েছিলেন গ্রামের শিক্ষকরা। সামান্য অর্থমূল্যে দরিদ্র ছাত্রদের জন্যও বই ভাড়া দেন তাঁরা। তবে সে অর্থমূল্য নামমাত্র। তবে অধ্যায়ন শেষ হলেই আবার ফিরত আসে সেসব বই। বিশ্বাসের ওপর ভর দিয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে এই বই-সইয়ের সম্পর্ক।

আঙ্কার-কনকা জেলার এই লাইব্রেরিই স্যানিটেশন কর্মীদের বিশ্রামাগার। দুপুরের বিরতিতে এখানেই আড্ডা জমান তাঁরা বইয়ের সঙ্গে। যাঁরা সেইভাবে বইপ্রেমী ছিলেন না তাঁদেরও অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে বই পড়া। এই উদ্যোগের পাশে থাকতে এগিয়ে এসেছে প্রশাসনও। শহরের মিউনিসিপাল কর্পোরেশন থেকে লাইব্রেরির জন্য ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে স্থায়ী বেতনভুক কর্মীর। তাঁরাই বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণ করেন এই গ্রন্থাগারের।

আরও পড়ুন
যুদ্ধের বিপরীতে অস্ত্র বই! অরুণাচল সীমান্তে ছাত্রদের হাতেই জন্ম নিচ্ছে লাইব্রেরি

লাইব্রেরির সাফল্যের পর একটি আবর্জনার ট্রাককেও চলমান লাইব্রেরীতে পরিণত করেছেন সাফাইকর্মীরা। সারা শহরের বইপ্রেমিকরা যাতে রাস্তাতেও অবসর সময়ে পড়ে ফেলতে পারেন দু’লাইন পছন্দদের, উদ্দেশ্য তাই-ই। এই অভিনব প্রয়াসের জন্য যে কোনো প্রশংসা বাক্যই হয় সামান্য হয়ে দাঁড়াবে তাঁদের কাছে...

তথ্যসূত্র-
১. Double Half, ফেসবুক
২. Garbage collectors open library with abandoned books, Spencer Feingold and Hande Atay Alam, CNN

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো বই! পৃথিবীতে এখনও টিকে এমন ১৮টি উদাহরণ