স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার, অর্থাভাবে করোনায় মৃতদের সৎকারে ব্যস্ত উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া

লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন অনেকেই। উপার্জন বন্ধ হওয়ায় অনেক পরিবারেই নেমে এসেছে অর্থাভাবের অন্ধকার। সংসারের খরচ টানতে তাই পড়াশোনা ছেড়েই কাজে নেমেছেন স্কুল পড়ুয়া। বাধ্য হয়েই করোনার আবহে সংক্রমিতদের মৃতদেহ পোড়ানোর কাজ করছেন স্কুলের ছাত্র চাঁদ মহম্মদ।

উত্তর-পূর্ব দিল্লির সিরামপুরের একটি বস্তির বাসিন্দা চাঁদ। মা, দাদা এবং তিন বোন নিয়েই তাঁর পরিবার। তবে দীর্ঘদিন ধরে থাইরয়েডের অসুস্থতায় ভুগছেন তাঁর মা। অন্নসংস্থান এবং মায়ের চিকিৎসার পাশাপাশি বোনেদের এবং নিজের পড়াশোনার খরচও চালাতে হয় তাকে। সব দিক বজায় রেখেই সামান্য কাজ করত চাঁদ। এখন সেসব বন্ধ। দাদা কাজ করতেন একটি দোকানে। লকডাউনে হারিয়েছে সেই চাকরিও। ফলে পুরো পরিবারের দায়িত্ব এসে বর্তেছে তাঁর কাঁধেই। 

লকডাউনেই কাজ খুঁজতে তাকে পথে নামতে হয়েছিল তাই। প্রথমে দিল্লির লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালে ঝাড়ুদারের কাজে নিযুক্ত হয় চাঁদ। ৮ ঘণ্টার শিফটে হাসপাতাল স্যানিটাইজ করা থেকে শুরু করে মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সবই করতে হত তাকে। পরে তাঁর কপালে জোটে মৃতদেহ সৎকারের কাজ। দিল্লিতে করোনা আক্রান্তে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে উত্তরোত্তর। পিপিই-কিট পরে এই পরিস্থিতির সঙ্গেই লড়ে যাচ্ছেন চাঁদ।

মাত্র ১৭ হাজার টাকা মাসিক বেতনে এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজই নিজের হাতে তুলে নিয়েছে চাঁদ। অথচ তার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। এখন সে দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠ্যরত। কিন্তু পড়াশোনা ছেড়ে তাঁকে সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে এই বয়সেই। চাঁদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মারণ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেলেও ক্ষিদেই হয়তো শেষ করে দেবে তার পরিবারকে। আর পড়াশোনার জন্যে টাকা যে প্রয়োজন, তা বলাই বাহুল্য। এই সবকিছুর মধ্যেই ঘেঁটে যাচ্ছে তার স্বপ্নগুলো। এ যেন এক অদ্ভুত বেঁচে থাকার লড়াই...

Powered by Froala Editor