করোনা-প্রতিরোধে বিশেষ মাস্ক তৈরি বর্ধমানের কিশোরীর, স্বীকৃতি দিল কেন্দ্রও

করোনার মহামারী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে একের পর এক নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে দেশের ছাত্রসমাজ। লকডাউনে বিপর্যস্তদের সাহায্য থেকে নতুন আবিষ্কার, কোনো কিছুতেই পিছিয়ে নেই পড়ুয়ারা। এই যুদ্ধের অন্যতম সৈনিক তারা। এবার বাংলার এক কিশোরীর যুগান্তকারী আবিষ্কার ভরসা দিল স্বাস্থ্য দপ্তরকে।

দিগন্তিকা বসু। বাড়ি বর্ধমানে। একাদশ শ্রেণীর স্কুল এই পড়ুয়ার বয়স কম হলেও, চিন্তাভাবনা সুদূরপ্রসারী। মেমারির বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির শাখা ২-এর এই ছাত্রী তৈরি করল করোনা প্রতিরোধক বিশেষ মাস্ক। এই মাস্ক করোনার যুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনোভেশন ফাউন্ডেশন একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। চ্যালেঞ্জ কোভিড-১৯ কম্পিটিশন (সি-৩)। ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল দিগন্তিকা। মাত্র সাত দিনের মধ্যেই বানিয়েছিল এই বিশেষ মাস্ক। বলাই বাহুল্য, ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার বিচারকরা স্বীকৃতি দেয় তার আবিষ্কারকে।

এই বিশেষ মাস্কটির নাম ‘এয়ার প্রোভাইডিং এন্ড ভাইরাস ডেসট্রয়িং মাস্ক’। একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিমন্ত্রক শিলমোহর দিয়েছে এই মাস্ককে। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই মাস্ক ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রক অনুমতি চায় ওই ছাত্রীর কাছে। অবিলম্বে সম্মতি জানায় বঙ্গতনয়া। কাজেই কিছুদিনের মধ্যে বাজারে আসতে চলেছে এই মাস্ক। আবিষ্কারটি সম্পূর্ণ সুরক্ষা প্রদান করবে সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের। এমনটাই মনে করছেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা।

অনেকটা হৃদপিণ্ডের মতোই কাজ করে এই মাস্কটি। দুটি আধারের সমন্বয়ে তৈরি এই মাস্ক। প্রত্যেকটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি করে একমুখী ভাল্ব। একটি শ্বাস গ্রহণ এবং অন্যটি নিঃশ্বাস ত্যাগের জন্য। আধার দুটিতে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। যা ভাইরাসের উপরের লিপিড প্রোটিনের স্তরকে ভেঙে ফেলতে সক্ষম। শ্বাস গ্রহণ এবং ত্যাগের সময়, ওই আধার দুটি নষ্ট করবে ভাইরাসকে। তাই চিকিৎসক এবং রোগী, উভয়ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হতে পারে এই মাস্ক। এই প্রযুক্তির সাহায্যে আটকানো যেতে পারে সংক্রমণ।

তবে এটাই প্রথম না। এর আগেও বহুবার পুরস্কৃত হয়েছে এই খুদে গবেষক। এমনকি একটি পেটেন্টও রয়েছে তার ঝুলিতে। ছোটো থেকেই বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উপর বিশেষ ঝোঁক ছিল। এমনটাই জানিয়েছে দিগন্তিকা। লকডাউনে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে, পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছিল বছর ১৭-র এই কিশোরীকে। অপেক্ষা না করে, বাড়িতেই তৈরি করে ফেলে গবেষণাগার। নকসা বানায় ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য নতুন অস্ত্রের। এই মাস্ক ছাড়াও দিগন্তিকার আরো তিনটি আবিষ্কার পরীক্ষা করে দেখছে সরকারের প্রযুক্তিমন্ত্রক। যেগুলিও সাহায্য করতে পারে করোনা মোকাবিলায়।

দেশে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৯ হাজার। সংক্রমণের অঙ্ক লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিদিন। কবে সুস্থ হয়ে উঠবে দেশের পরিস্থিতি, জানা নেই কারোর। এই কঠিনতম মুহূর্তে হাজার হাজার দিগন্তিকাদের আবিষ্কারই ভরসা যোগাচ্ছে দেশবাসীকে। তাদের ঋণ অনস্বীকার্য।