সাম্যবাদের মৃত্যু ঘটেছে চিনে, জন্ম নেবে ‘নিও-কমিউনিজম’; বলছেন স্লাভোয় জিজেক

স্লাভোয় জিজেক। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে অত্যন্ত পরিচিত একটি মুখ। বিশ্বের প্রথম সারির বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একজন। অন্যতম স্লোভেনিয়ান এই দার্শনিকের মতবাদ এবং আইডিওলজি জনপ্রিয়তা পেয়েছে সারা পৃথিবীতে। প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়ার ১০০ দিনের মধ্যেই তিনি প্রকাশ করেছিলেন তাঁর বই ‘প্যানডেমিক’। যাতে তিনি বিস্ফোরণ করেছেন বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার অবস্থা, এবং আতঙ্কের ইস্তেহারের উপর। তবে শুধু বর্তমান ছবিই তুলে ধরেননি হদিশও দিয়েছেন এই অবস্থা থেকে মুক্তির। কী মনে করছেন এই কমিউনিস্ট দার্শনিক?

একজন কমিউনিস্ট হয়েও বেশ জোর গলায় জিজেক মন্তব্য করেছেন, কমিউনিজমের মৃত্যু হয়েছে চিনে। জিজেক মানতে নারাজ পরিবেশ ধ্বংসের জন্য, প্রকৃতিই এই শাস্তি দিচ্ছে সভ্যতাকে। বরং তিনি মনে করছেন, মানুষের কারণে পরিবেশে দূষণ ছিলই। তবে মানুষ এমন কোনো প্রজাতি নয়, তার গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবস্থান নেই। বাকি প্রাণীদের মধ্যে মানুষের মধ্যেই ভাইরাসের সংক্রমণ এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। তবে ভাইরাসের এই মহামারীর আকার ধারণের ক্ষেত্রে তিনি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন চিনকে। সত্যতা গোপনের ফলেই যে বড় চেহারা নিয়েছে সংক্রমণ, ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। আর এর প্রেক্ষিতেই তাঁর দাবি, কমিউনিজমের মৃত্যু হয়েছে চিনে।

চিনের পাশাপাশিই তিনি বিঁধেছেন অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের। তাঁরা কখনো বলছেন আতঙ্কিত না হওয়ার ব্যাপারে, কখনো শোনাচ্ছেন ভীতিকর পরিসংখ্যান। এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। জানাচ্ছেন ভাইরাসের পাশাপাশি সংক্রমণ ছড়িয়েছে ভুয়ো খবর, ষড়যন্ত্র এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের। ভাইরাসের কারণে দেশগুলি নিজেদের মধ্যে প্রাচীর তুলেছে। যে দেওয়াল, যে বিভেদ আগেই ছিল, তা প্রকট হয়েছে আরো। তবে তার কারণ খানিকটা সরে গিয়ে এখন ভাইরাস। প্রত্যেকটি উন্নত দেশই চেষ্টা করছে অনুন্নত দেশগুলি থেকে ভাইরাসের বাহক হয়ে যেন কেউ প্রবেশ না করে সে দেশে, বা তার ঠিক উল্টোটাও। কিন্তু কতটা যুক্তিযুক্ত এই সিদ্ধান্ত? তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আমরা সকলে আসলে একই নৌকায় আছি। ফলে আমেরিকায় কোনো একজন আক্রান্ত হলে তার ঠিক উল্টোদিকে ভারতেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। ফলে এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে দরকার ঐক্যের। নিজের দেশকে বাঁচাতে গেলে পার্শবর্তী দেশের দিকেও যে সাহায্যের হাত বাড়ানো প্রয়োজন তার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

মহামারীর মোকাবিলায় প্রায় সমস্ত দেশই বেছে নিয়েছে লকডাউনকে। জোর দিয়েছে আইসোলেশনের ওপর। কিন্তু কতটা যুক্তিযুক্ত এই পদ্ধতি তার দিকেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন জিজেক। তাঁর মতে প্রত্যেক দেশের হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ এবং শরণার্থী রয়েছে। তাঁদের আইসোলেশনের সুযোগ নেই, সুতরাং তাঁদের এই বিপদের দিকেই কি ঠেলে দিচ্ছে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি সমাধানের উপায়ও বাতলেছেন জিজেক। তুলে এনেছেন ব্রিটেনের উদাহরণ। স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের ডাকা সাড়া দিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। যাঁরা নিজেদের বিপন্ন করেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সাধারণের জন্যই। সংক্রমণ সারিয়ে তুলতে, অসুস্থদের পরিচর্যা করতে এবং জরুরী ব্যবস্থাগুলি চালু রাখতে যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন জিজেক।

আরও পড়ুন
মৃত্যুর পরও ভারত-চিন সীমান্ত ‘পাহারা’ দেন হরভজন সিং, সতর্ক করেন সৈন্যদের!

ভাইরাস চিরতরে কবে বিদায় নেবে তার সঠিক হদিশ কেউ-ই দিতে পারবে না। তবে এই আবহ থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র সম্প্রীতি এবং সহযোগিতা। সারিয়ে তুলতে পারে মানসিকতার রোগ। করোনা ভাইরাসে সেই পথই দেখিয়েছে আমাদের, বিশ্বাস জিজেকের। উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলছেন, ভাইরাসের আবহে ট্রাম্প বেসরকারি সংস্থাগুলিকে দখল করতে চাইছেন। যা আগে কখনও ভাবা সম্ভব ছিল না। অতি-বামপন্থা এবং পুঁজিবাদ এই দুয়ের বিপক্ষে গিয়েই মহাজাগতিক এই বিপর্যয় আমাদের ক্রমে নিয়ে যাবে বিশ্বব্যাপী একটি ব্যবস্থার কাছে। যেখানে রাষ্ট্রভিত্তিক সংকীর্ণতা নেই। জন্ম নেবে এক নতুন কমিউনিজম, তাঁর কথায় নিও-কমিউনিজম। কার্যত ভাইরাসের পরবর্তী পৃথিবী একেবারেই আলাদা হবে আজকের থেকে। যেখানে আজকের প্রচলিত যাপনচিত্র স্রেফ ‘নস্টালজিয়া’ হয়ে থেকে যাবে চিরকাল...

আরও পড়ুন
থামিয়ে দিতে পারে যুদ্ধ, কাড়তে পারে শাসকের প্রাণ; সূর্যগ্রহণ ঘিরে কিংবদন্তি যুগে যুগে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৫০ বছর ধরে চিন থেকে সম্প্রচারিত হচ্ছে বাংলা সংবাদ, বেজে ওঠে রবীন্দ্রসঙ্গীতও!

More From Author See More