গত ৩০ এপ্রিল ১০০ বছরে পা রেখেছেন ক্যাপ্টেন টম মুর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই যোদ্ধা জীবন সায়াহ্নে পৌঁছেও তাঁর যুদ্ধ থামিয়ে দেননি। এই করোনা পরিস্থিতিতেও তাঁকে এগিয়ে আসতে দেখেছি আমরা। গতমাসেই তাঁর উদ্যোগের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে থাকা ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পথে নেমেছিলেন তিনি। অবশ্য সেই উদ্যোগ যে ক্রমশ পৃথিবীর অন্যতম উল্লেখযোগ্য অর্থ সংগ্রহ প্রকল্পে পরিণত হবে, সেটা ভাবতে পারেননি তিনি। আর সেই উদ্যোগকে সম্মান জানাতেই সম্প্রতি ক্যাপ্টেনকে নাইট উপাধিতে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিল ইংল্যান্ড সরকার।
৬ এপ্রিল থেকে অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন ক্যাপ্টেন মুর। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল তাঁর প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে অন্তত ১০০০ ইউরো অর্থ তুলে দেবেন এনএইচএস কর্মীদের হাতে। কিন্তু দেখতে দেখতে তাঁর উদ্যোগের কথা ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে। এই উদ্যোগের পাশে এসে দাঁড়ান অসংখ্য মানুষ। আর তার ফলে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে দাঁড়ায় ৩২ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ ৪৫ মিলিয়ন ডলারের সমান। আর এক শতবর্ষের নাগরিকের কাছ থেকে এই সাহায্য পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন এনএইচএসের আধিকারিকরাও।
শতবর্ষে পৌঁছেও রেকর্ড তৈরি করলেন ক্যাপ্টেন মুর। গিনিস বুকের তথ্য অনুযায়ী এটি পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাস্থ্যখাতে সংগৃহীত সর্বকালের বৃহত্তম অর্থ সাহায্য। ক্যাপ্টেনের এই উদ্যোগকে সম্মান জানিয়েছেন নানা দেশের মানুষ। ইংল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বিভাগের তরফ থেকে তাঁকে সাম্মানিক কর্নেল উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। তবে সেইসঙ্গে ইংল্যান্ডের সাধারণ মানুষের দাবি ছিল, তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করতে হবে। প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের সাক্ষর সম্বলিত দাবিপত্র জমা পড়ে এই মর্মে। আর অবশেষে তাতে সম্মতি জানালেন ইংল্যান্ড সরকারও। অনুমতি মিলেছে স্বয়ং মহারানির কাছ থেকেও। অতএব এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
লকডাউনের মেয়াদ শেষ হলেই জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তাঁকে এই উপাধিতে ভূষিত করবেন মহারানি। প্রধানমন্ত্রী জনসনের কথায়, তিনি এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড়ো সম্পদ। অথচ এত সম্মান পেয়েও নিজের অধ্যাবসায়ের প্রতি বিচলিত নন ক্যাপ্টেন টম মুর। তাঁর সাহায্য যদি দেশকে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে, তাতেই খুশি তিনি।
Powered by Froala Editor