ভারতের প্রথম ‘ভ্রাম্যমাণ’ কবিতা উৎসব, ভাষা-সংস্কৃতি-বর্ণ-যৌনতার সীমা ভাঙবে ‘ক্যান্টো’

কবিতাপাঠ, কবিতা ও সাহিত্যের ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত আলোচনা এবং কর্মশালা— আয়োজন থাকবে সবকিছুরই। একই ছাদের নিচে জড়ো হবেন বিশ্বের খ্যাতনামা কবি, শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপকরা। অবাধ প্রবেশাধিকার ছাত্রছাত্রী এবং কবিতাপ্রেমী মানুষদেরও। আগামী ১৫ থেকে ১৯ মার্চ— কবিতাকে কেন্দ্র করে এমনই এক অভিনব রূপকথার দুনিয়া গড়ে উঠতে চলেছে ভারতের বুকে। নেপথ্যে আন্তর্জাতিক ‘ভ্রাম্যমাণ’ কবিতা উৎসব (Poetry Festival) ‘ক্যান্টো’ (CANTO)। উল্লেখ্য, কবিতাকে ঘিরে এমন ‘ভ্রাম্যমাণ’ উৎসবের আয়োজন ভারতে এই প্রথম।

চারদিন-ব্যাপী এই উৎসব আয়োজিত হতে চলেছে নয়া দিল্লি ও কলকাতায়। ১৫ ও ১৬ই মার্চ নয়াদিল্লির শিকাগো ‘ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো সেন্টার’-এ অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের প্রথম পর্ব। অন্যদিকে শেষ দু’দিন অর্থাৎ ১৮ ও ১৯ মার্চ, উৎসবের দ্বিতীয় পর্বটি আয়োজিত হচ্ছে কলকাতায়, শতাব্দী প্রাচীন ‘দ্য বেঙ্গল ক্লাব’-এ। এই উৎসব আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়। জুড়ে রয়েছে হারপার কলিনস প্রকাশনা সংস্থা, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। জুড়ে রয়েছি আমরা, প্রহর.ইন-ও। 

গতকালই, প্রেস রিলিজে অনুষ্ঠানের সামগ্রিক সূচি প্রকাশ্যে আনেন ‘ক্যান্টো’ কবিতা উৎসবের ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর অভীক চন্দ। তাঁর কথায়, “সম্পূর্ণভাবে কবিতাকে কেন্দ্র করেই আমাদের এই বহুভাষিক, বহুসাংস্কৃতিক, ভ্রাম্যমাণ উৎসব। ভারত তো বটেই, এধরনের ভ্রাম্যমাণ আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবের আয়োজন এশিয়াতেও এই প্রথম। ভাষা, সংস্কৃতি, বর্ণ ও লিঙ্গ-যৌনতার সীমা ভেঙে কবিতাচর্চা ও কবিতা-সৃষ্টির অনন্য পরিবেশ গড়ে তুলতেই এই বিশেষ উদ্যোগ।” জানা গেল, ইংরাজি মৌলিক কবিতার পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষার কবিতা এবং অনুবাদ— কাব্যসাহিত্যের প্রতিটি আঙ্গিকই ছুঁয়ে যাবে ‘ক্যান্টো’।

আসলে বাংলা তো বটেই, ভারতের সঙ্গে কবিতার যোগ বহু প্রাচীন। একটা সময় এ-দেশের মাটিতেই লেখা হয়েছিল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মহাকাব্য। নালন্দা বা তক্ষশীলার মতো প্রাচীন ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও নিয়মিত কবিতাচর্চা চলত। হাজির থাকতেন দেশ-বিদেশের পণ্ডিতরা। অথচ, হালের আমলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাহিত্য উৎসব আয়োজন করা হলেও, সেখানে গৌণই থেকে যায় কবিতা। শুধুমাত্র কবিতা কেন্দ্রিক উৎসব যে হয় না তেমনটা নয়। তবে সেক্ষেত্রে আবার আঞ্চলিক গণ্ডিতে বাধা পড়ে গতি হারায় কবিতাচর্চার এই প্রয়াস। সেখানে দাঁড়িয়ে ‘ক্যান্টো’ যেন নতুন করে প্রাণসঞ্চার করতে চলেছে ভারতের কবিতামহলে। গড়ে তুলছে কবিতাচর্চার এক আন্তর্জাতিক মঞ্চ। এশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ-সহ গোটা বিশ্বের কবি এবং কবিতাপ্রেমীদের নিয়ে আসছে একই ছাতার তলায়। 

চারদিনের এই বিশেষ কবিতা উৎসবে হাজির থাকবেন পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি বিজয় শেষাদ্রি, ম্যান বুকার ও টিএস এলিয়ট পুরস্কার-প্রাপক জর্জ সিজার্টেস, কমনওয়েলথ পুরস্কার-জয়ী অমিত চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা। থাকছেন সচ্চিদানন্দন, বিবেক দেবরয়, জয় গোস্বামী, অনিতা নায়ার, অরুন্ধতী সুব্রামনিয়ামের মতো সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার-জয়ী একাধিক খ্যাতনামা ভারতীয় কবিও। সবমিলিয়ে এ যেন এক চাঁদের হাট। স্বাভাবিকভাবেই কবিতার এই মেহফিলের স্বাদ নিতে উত্তেজনায় ফুটছে রাজধানী ও তিলোত্তমা…

Powered by Froala Editor