জিআই তকমার পথে নদিয়ার সরভাজা ও সরপুরিয়া

শেষপাতে মিষ্টি না পড়লে অসম্পূর্ণ থেকে যায় বাঙালির ভুরিভোজ। মিষ্টির সঙ্গে যে বাঙালির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। রসনাতৃপ্তিতে একাধিক মিষ্টান্নের জন্ম দিয়েছে বাংলা। ২০১৮ সালে ওড়িশার সঙ্গে আইনি লড়াইয়ের পর রসগোল্লা তৈরির স্বীকৃতি পেয়েছিল বাংলা। স্বীকৃতি পেয়েছিল বর্ধমানের মিহিদানা, জয়নগরের মোয়াও। এবার জিআই তকমা পেতে চলেছে বাংলার আরও দুটি প্রাচীন মিষ্টির প্রণালী— সরভাজা ও সরপুরিয়া। যা গোটা রাজ্যবাসীর কাছে নিঃসন্দেহে ‘মিষ্টি’ খবরই বটে।

বছর চারেক আগের কথা। ২০১৭ সালেই সরভাজা ও সরপুরিয়ার জন্য জিআই ট্যাগের আবেদন করেছিলেন কৃষ্ণনগরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বীকৃতি পেতে বেশ খানিকটা অপেক্ষা করতে হল নদিয়ার ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টিদুটিকে। না, রসগোল্লার মতো এক্ষেত্রে অবশ্য অন্য কোনো রাজ্য দাবি করেনি সরভাজার ‘জন্ম’ নিয়ে। তবে সমস্যা বাঁধে অন্য জায়গায়। আসলে কৃষ্ণনগরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের সংগঠনের কোনো রেজিস্ট্রেশন না থাকায় ২০১৯ সালে খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল আবেদনপত্র। সেই জটিলতা কাটতেই এবার প্রসারিত হল জিআই তকমার পথ। 

সরভাজা ও সরপুরিয়ার ইতিহাস নিয়ে রয়েছে একাধিক কিংবদন্তি। কারোর মতে সরভাজা তৈরি হয়েছিল প্রায় ৫০০ বছর আগে। আবার এও কথিত আছে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পারিবারিক অনুষ্ঠানে ভিয়েনে প্রথম তৈরি হয়েছিল এই মিষ্টি। আর তার কারিগর ছিলেন নদিয়ার কিংবদন্তি মিষ্টি বিক্রেতা অধর দাস। তবে সেই বিতর্ক যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত এই দুই মিষ্টির দৌলতে জিওগ্র্যাফিকাল ইন্ডেক্স পেতে চলেছে নদিয়া। 

নদীয়ার সরপুরিয়া ও সরভাজার জনপ্রিয় গোটা রাজ্যেই। শতাব্দীপ্রাচীন এই মিষ্টির স্বাদ নিতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন বহু মানুষ। তবে লকডাউন ও কোভিড পরিস্থিতিতে বর্তমানে বেশ খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে ব্যবসা। পর্যটকদের অভাবে ধুঁকছে নদীয়ার মিষ্টির দোকানগুলি। তবে শুধু নদিয়া নয়, জেলার বাইরে বহু জায়গাতেই এখন তৈরি হয় এই দুই মিষ্টি। কিন্তু স্বাদ ও রন্ধন প্রণালীর তারতম্য থেকেই যায় পৃথক পৃথক জায়গায়। আর তা এই মিষ্টির ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ণ করে, এমনটাই অভিযোগ নদিয়ার কারিগরদের। জিআই তকমা পেলে সেই সমস্যার যে স্থায়ী সমাধান আসবে, সে ব্যাপারেই আশাবাদী স্থানীয় মিষ্টি বিক্রেতারা…

আরও পড়ুন
জিআই তকমা পেতে চলেছে বাংলার কালো-নুনিয়া ধান, অন্তিম স্বীকৃতির অপেক্ষা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্বীকৃতির খোঁজে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিন, আবেদন জিআই-এর