রূপান্তরকামীদের কাজ দিলে আয়করে ছাড়, ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বাংলাদেশের

প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের চাকরির সুযোগ করে দিলেই নিয়োগকারী সংস্থারা ছাড় পাবে করে। সম্প্রতি এমনটাই ঘোষণা করল শেখ হাসিনার সরকার। রূপান্তরকামী ও প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরাতেই এমন ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল বাংলাদেশ।

গত বৃহস্পতিবার বার্ষিক বাজেটের প্রস্তাবনার সময়ই এমনটা ঘোষণা করেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। সেখানেই উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশের যেকোনো কর্পোরেট এবং বেসরকারি সংস্থায় মোট কর্মীসংখ্যার ১০ শতাংশ অথবা ১০০ জন কর্মচারী রূপান্তরকামী হলে, নিয়োগকারী সংস্থা বিশেষ ছাড় পাবে আয়করে। তার পরিমাণ প্রদেয় করের প্রায় ৫ শতাংশ। ফলে, রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে বলেই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

“আমরা দীর্ঘদিন থেকেই এই বিষয়টিকে নিয়ে আমরা আন্দোলন করে আসছি। এই মানুষগুলোর কথা শুনতে হবে, তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে এই দাবি তো ছিলই। সেই আন্দোলন বা প্রচারেরই ফলাফল হয়তো এটা। এবার সর্বপ্রথম এই মানুষগুলোকে নিয়ে পার্লামেন্টে কথা উঠল”, জানালেন বাংলাদেশের এলজিবিটি উন্নয়ন সংস্থা ‘নো পাসপোর্ট ভয়েস’-এর সংগঠক হো চি মিন ইসলাম। 

পার্লামেন্টে নতুন অর্থবর্ষের এই বাজেট এখনও পাশ না হলেও, খুব দ্রুতই সম্পন্ন হবে সেই প্রক্রিয়া। কারণ, আওয়ামী লিগের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষও সমর্থন জানিয়েছে এই বিষয়টিকে।

আরও পড়ুন
আমাজন-ফ্লিপকার্টে কাজ পাবেন রূপান্তরকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও

বাংলাদেশে সব মিলিয়ে প্রায় ২ থেকে ৫ লক্ষ এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের অভাব, তেমনই প্রকট ছিল বৈষম্যও। এমনকি বছর দুয়েক আগে মৌলবাদীদের হাতে প্রাণও হারাতে হয় এক রূপান্তরকামীকে। সরকারের এই প্রগতিশীল মানসিকতা বদল আনবে সেই সমাজব্যবস্থাতেও।

আরও পড়ুন
এই প্রথম সংবাদ-উপস্থাপকের ভূমিকায় কোনো রূপান্তরকামী, অনন্য নজির বাংলাদেশে

হো চি মিন জানালেন, “ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সংস্থা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ওরা জানাচ্ছে, প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের কাজ দিতে ইচ্ছুক। সমাজে যদি সত্যিই এলজিবিটি সম্প্রদায়ের উন্নতি করতে হয়, তবে তাঁদের ক্ষমতায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। এবং কাজের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। ফলে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত সত্যিই একটা ইতিবাচক দিক।”

তবে শুধু কর্মসংস্থান তৈরিই নয়, তার সঙ্গে পুরো পরিকাঠামোর পর্যালোচনা এবং নিয়মিত নজরদারিও চালিয়ে যেতে হবে সরকারকে। এমনটাই জানাচ্ছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু যৌনতার মানুষেরা। উল্লেখ্য, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম এই ধরনের পদক্ষেপ নিল বাংলাদেশ। তৈরি করল এক অনন্য নজির। তার ফলে শতাব্দীপ্রাচীন বৈষম্যের শিকলই যে শুধু ভাঙবে, তা নয়। বরং, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এই পরিকল্পনাই মডেল হয়ে উঠতে চলেছে ভারত-সহ অন্যান্য এশিয় দেশগুলির কাছে…

Powered by Froala Editor