প্রয়াত বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আলোকচিত্রী সাইদা খানম

হাতে ক্যামেরা তুলে নিয়েছিলেন মাত্র ১২ বছর বয়সে। তখনও বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। সদ্য ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়ে জন্ম নিয়েছে পূর্ব পাকিস্তান। সেই ১৯৪৯ সাল নাগাদ দেশে লিঙ্গবৈষম্য যখন একেবারেই সরে যায়নি, তখন একটি মুসলিম পরিবারে পড়াশোনা করাই রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু সাইদা খানম সেই তখনই শুরু করেছিলেন ফটোগ্রাফির চর্চা। আসন্ন বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবসের প্রাক্কালে আলোকময় জীবন থেকে বিদায় নিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্র শিল্পী। মঙ্গলবার ভোর ৩টে নাগাদ তাঁর জীবনাবসান হয়। সাইদা খানমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।


পরিবারের সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। ৮২ বছর বয়সে সমস্ত লড়াই শেষ করে অবশেষে বিদায় নিলেন সাইদা খানম। কিন্তু রেখে গেলেন তাঁর বর্ণময় জীবনের ইতিহাস। ১৯৩৭ সালে পাবনায় জন্ম সাইদা খানমের। ১২ বছর বয়সে ক্যামেরায় হাতেখড়ি এবং ১৯৫৬ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে পেশাদার ফটোগ্রাফির চর্চা শুরু। প্রথমে যোগ দিলেন ‘বেগম’ পত্রিকার আলোকচিত্রী হিসাবে। পরে বাংলা সাহিত্য এবং লাইব্রেরি সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ানের কাজে যোগ দেন। কিন্তু এর মধ্যে ফটোগ্রাফির চর্চায় ছেদ পড়েনি কোনোদিন।


আরও পড়ুন
বয়স ১০৪, গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড, নারীশক্তি সম্মানে ভূষিত মন কউর

সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’, ‘মহানগর’, ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ এই তিনটি ছবির শ্যুটিং-এর ছবি তুলেছিলেন সাইদা খানম। পাশাপাশি তুলেছেন বহু কিংবদন্তি মানুষের পোট্রেট। সেই তালিকায় আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, ইন্দিরা গান্ধী, নজরুল ইসলাম, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, বেগম সুফিয়া কামাল, মাদার টেরেজা – আরও অনেকে। সাইদা খানমের তোলা মুক্তিযুদ্ধের ছবি দেশে-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর মধ্যে বন্দুক হাতে নারী বাহিনীর ছবি তো রীতিমতো বিখ্যাত। ইউনেস্কো পুরস্কারের পাশাপাশি পেয়েছেন অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, বাংলাদেশ ফটগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানসূচক ফেলোশিপ। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বেশ কিছু বইও লিখছেন তিনি। তার মধ্যে আছে ‘ধূলোমাটি’, ‘স্মৃতির পথ বেয়ে’, ‘আমার চোখে সত্যজিৎ রায়’। ৮২ বছর বয়সেও কিন্তু ক্যামেরা থেকে হাত সরিয়ে নেননি সাইদা খানম। আশেপাশের আর কোনো দৃশ্যই তিনি ক্যামেরাবন্দি করবেন না। কিন্তু তাঁর তোলা অসংখ্য ছবি থেকে যাবে ইতিহাসের দলিল হয়ে।

আরও পড়ুন
পিতৃতান্ত্রিক সমাজের গালে চড়, নারীদের লড়াইয়ের কথাই তুলে ধরল 'থাপ্পড়'

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৪,৩০০ বছর আগেকার মন্ত্র খোদাই পাথরে, বিশ্বের প্রাচীনতম লেখক এক নারী