ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, নতুন আইন জারি বাংলাদেশে

বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিক্ষোভ চলছিল বাংলাদেশে। সরকারের কাছে দাবি ছিল পরিবর্তন আনা হোক ধর্ষণের শাস্তির আইনে। শেষ অবধি সেই দাবিই স্বীকার করে নিল সরকার। মঙ্গলবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর কার্যকর হল ধর্ষণ আইনের সংশোধন। বাংলাদেশেও এবার থেকে ধর্ষণকারীদের চূড়ান্ত শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।

উত্তরপ্রদেশের হাথরাস-সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তখন ঘটে চলেছে একের পর এক নৃশংস ধর্ষণের ঘটনা। তখন প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের অবস্থাও অনেকটাই একইরকম। নোয়াখালিতে একটি মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা হয় ওই সপ্তাহেই। বিবস্ত্র করে সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় ধর্ষকরা।

সেই ঘটনার পরেই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। দেশ জুড়ে পথে নামেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মানুষ। বেশিরভাগ আন্দোলনকারীদের দাবিই ছিল, বাংলাদেশে নির্যাতিতারা ন্যায়-বিচার পান না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। আর আইনি শিথিলতার কারণেই পরিবর্তিত হচ্ছে না ধর্ষকদের মানসিকতাও। এতদিন অবধি বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তা সংশোধন করে আইনি ভাবে শাস্তি হোক মৃত্যুদণ্ড। এমনটাই চেয়েছিল বাংলাদেশের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। 

তবে শুধুই কি নোয়াখালি? চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই প্রায় ৯৭৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। যার মধ্যে ২০৮টি গণধর্ষণের ঘটনা। কিন্তু এরপরও এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিষ্ক্রিয়তা বেশ অবাকই করেছিল সাধারণ মানুষকে। অভ্যন্তরীণ বিতর্কের মুখেও পরতে হয় তাঁকে। শেখ হাসিনার পদত্যাগেরও দাবি জানান অনেকেই। সেই চাপের মুখে পরেই হয়তো শেষ অবধি বদল আনা হল দেশের আইনে। জয় ছিনিয়ে নিল সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ।

চলতি বছর জানুয়ারিতেই সর্বোচ্চ আদালত ধর্ষণ মামলার তদন্তের জন্য বিশেষ কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল সরকারকে। তবে এই কমিশন গঠন করা হয়নি এখনও। আইন সংশোধনের সঙ্গে সেই উদোগেও নতুন করে জোর দেওয়া হয়। পাশাপাশি ঠিক করে দেওয়া হয় ধর্ষণের ঘটনার ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হবে মামলার। নির্যাতিতা যাতে দ্রুত বিচার পায়, সেই দিকেই বিশেষ নজর দেবে ওই ট্রাইবুনাল। 

আইন প্রণয়নের পাশাপাশি মঙ্গলবার বাংলাদেশের মন্ত্রী পরিষদের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম দাবি তোলেন, ধর্ষকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও এবার থেকে বাজেয়াপ্ত করুক প্রশাসন। সেই সম্পত্তি আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রদান করা হোক নির্যাতিতাকে। বাংলাদেশের দণ্ডনীতির ১৫ নং ধারায় ক্ষতিপূরণের বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এড়িয়ে যাওয়া হয় তা। বিচারকরা যাতে সেইদিকটাও বিশেষভাবে নজর দেন, তারই আর্জি জানিয়েছেন তিনি...

আরও পড়ুন
ধোনির ছোট্ট মেয়েকে ধর্ষণের হুমকি; ক্রিকেট কি এই শিক্ষাই দিচ্ছে আমাদের?

Powered by Froala Editor