ভাঙল অচলায়তন, মহাকাশে পাড়ি দিলেন বিশেষভাবে সক্ষম নভোচারীর দল

শুরু নেই কোনো। নেই শেষও। মহাকাশকে আক্ষরিক অর্থেই আদিগন্ত বা সীমানাহীন বলা যায়। কিন্তু সেই মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে যাত্রী নির্বাচনের সময়ই সুস্পষ্ট বিভাজনরেখা তুলে দিই আমরা। বা ভালো করে বলতে গেলে ক্ষমতাশালী সংশ্লিষ্ট মহাকাশ সংস্থাগুলি। এবার ভাঙল সেই অচলায়তন। গত রবিবার বিশেষভাবে সক্ষম ১২ জন যাত্রী নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ‘মহাকাশ’-এ পাড়ি দিল বেসরকারি সংস্থা অ্যাস্ট্রোঅ্যাক্সেসের প্যারাবোলিক ফ্লাইট।

বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথমবার এতজন বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের নিয়ে মহাকাশযাত্রার এই উদ্যোগ। তাঁরা মহাকাশ অভিযানে সক্ষম কিনা— তা নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। ইতিপূর্বে একাধিকবার দাবিও উঠেছিল বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য মহাকাশযাত্রার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই আবেদনে সেইভাবে কান দেয়নি বিশ্বের দুই শীর্ষস্থানীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা এবং রসকসমস। প্রাথমিকভাবে একই অবস্থান ধরে রাখলেও, চলতি বছরের শুরুতে নভোচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সক্ষমদের সুযোগ করে দেয় ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি।

তবে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি ভার্জিন গ্যালাকটিক, স্পেসএক্সের মতো একাধিক বেসরকারি মহাকাশ সংস্থার উত্থানই এবার বদলে দিল পরিস্থিতি। বিশেষভাবে সক্ষম যাত্রীদের নিয়ে অ্যাস্ট্রোঅ্যাক্সেসের পরীক্ষামূলক উদ্যোগ প্রমাণ করল, মহাকাশবিদ্যা সম্পর্কে উপযুক্ত শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ পেলেই সফলভাবে মহাকাশে অভিযানে সক্ষম তাঁরা। শুধু তাই-ই নয়, শূন্য গ্র্যাভিটিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুছে যায় প্রতিবন্ধকতাও।


শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। রবিবারের উড়ানে নজরে এল এমন ঘটনাই। মহাকাশ অভিযানে গিয়ে প্রথমবারের জন্য নিজের পায়ে দাঁড়ালেন এরিক ইনগ্রাম, রচেনস্টাইনের মতো যাত্রীরা। যাঁদের জীবনের অধিকাংশটা কেটেছে হুইলচেয়ারের ওপর ভর করে। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও শূন্য গ্র্যাভিটিতে শরীরের ওজন প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়ায় তাঁরাও দাঁড়াতে পারলেন সোজা হয়ে। এর আগে এই ধরনের পর্যবেক্ষণের সাক্ষী থাকেনি বিজ্ঞান। পাশাপাশি আল্ট্রাসোনিক যন্ত্রের ব্যবহারে মহাকাশেযানের ভিতর সফলভাবে সমস্ত বাধা অতিক্রম করলেন দৃষ্টিহীন নভোচারীও। 

তবে রকেটে নয়, প্যারাবোলিক ফ্লাইটের মাধ্যমেই বিশেষভাবে সক্ষম যাত্রীদের কাছে মহাকাশ অভিযানের অভিজ্ঞতা পৌঁছে দেয় অ্যাস্ট্রোঅ্যাক্সেস। বিশেষভাবে তৈরি এই বিমান উড়ান দেয় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরেই।  গতি এবং গতিপথের অভিমুখ পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করে শূন্য গ্র্যাভিটির অনুরূপ পরিবেশ। যা প্রতিক্ষেত্রে স্থায়ী হয় ৩০-৪০ সেকেন্ড। মূলত মহাকাশযাত্রার আগে নকল শূন্য গ্র্যাভিটি তৈরি করে নভোচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যই ব্যবহৃত হয় প্যারাবোলিক ফ্লাইট। অ্যাস্ট্রোঅ্যাক্সেসের সাম্প্রতিক উদ্যোগে সবমিলিয়ে ১৫ বার এই অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন মহাকাশযাত্রীরা। কেবলমাত্র ১টি ঘটনা বাদ দিলে বিশেষভাবে সক্ষমযাত্রীদের আঘাত পাওয়ার ঘটনা ঘটেনি সমগ্র উড়ানে। ফলে বলা যেতে পারে এই উদ্যোগ ৯০ শতাংশেরও বেশি সফল। 

২০০৭ সালে প্রথম প্যারাবোলিক বিমানে করে মহাকাশযাত্রা করেছিলেন এইযুগের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। তারপর কেটে গেছে ১৪টি বছর। অথচ, সেই অর্থে তাঁদের জন্য কোনো উদ্যোগই নেয়নি সংশ্লিষ্ট স্পেস এজেন্সিগুলি। এবার সেই বেড়াজাল ভেঙে শুরু হল মহাকাশবিজ্ঞানের নতুন অধ্যায়…

Powered by Froala Editor

More From Author See More