দু-শতাব্দী পেরিয়ে আলোর পথে ভারতীয় শিল্পীদের আঁকা ছবি

ভারতের বুকে তখন সদ্য রাজত্ব্ শুরু করেছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। একটু একটু করে কোম্পানির কর্মচারীরা আসতে শুরু করেছেন এদেশে। এ এক সম্পূর্ণ নতুন দেশ। কত ধরণের প্রাণী, কত উদ্ভিদ। বেশিরভাগই ইংরেজদের একেবারে অপরিচিত। ব্রিটিশ কর্মচারীদের অনেকেরই মনে হয়, ইংল্যান্ডে পরিবারের মানুষদের যদি এসব দেখানো যেত! তার অবশ্য কোনো চটজলদি উপায় নেই। ক্যামেরার যুগ শুরু হতে তখন অনেক দেরি। উপায় অবশ্য পাওয়া গেল একটা। ভারতের, বা বলা ভালো বাংলার শিল্পীদের দিয়ে ছবি আঁকালেন তাঁরা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্যোগে এর জন্য তৈরি হয়েছিল একটি স্কুলও। সেইসব ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হল ইংল্যান্ডে। তবে বাঙালি শিল্পীদের আঁকা সেইসব ছবি এতদিন ধরে তেমন স্বীকৃতি পায়নি। এইবার সেই অবস্থার বদল হতে চলেছে। ইংল্যান্ডের নিলাম সংস্থা সথেবি’জ-এর উদ্যোগে এবার শুরু হতে চলেছে প্রদর্শনী।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর্কাইভে বর্তমানে রয়েছে ২৯টি ছবি। যার মধ্যে একটি আবার কিছুদিন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডির স্ত্রী জ্যাকলিন কেনেডির মালিকানাধীন ছিল। এই ২৯টি ছবির মধ্যে থেকে ৭টি ছবিকে বেছে নেওয়া হয়েছে প্রদর্শনীর জন্য। প্রতিটি ছবির সময়কালই আঠেরো শতকের শেষভাগ। পাশ্চাত্য শিল্পকলার সঙ্গে ভারতীয়দের তেমন যোগাযোগ তখনও গড়ে ওঠেনি। তবে ছবিগুলি পুরোপুরি ভারতীয় শিল্পের ঘরানারও নয়। শিল্পীরা যেন টের পেয়েছিলেন তাঁদের দর্শকের রুচি। ছবির পরতে পরতে তাই উঠে এসেছে এক একটি প্রাণীর অ্যানাটমি। জ্যাকলিন কেনেডির আঁকা ছবিটিতে যেমন দেখা যায় একটি সারস তার লম্বা ঠোঁট দিয়ে একটি মৃত শামুকের মাংস খাচ্ছে। এটি এঁকেছেন শেখ জেন-আল-দিন নামের কোনো এক শিল্পী। রয়েছে আশ্চর্য এক বাদুড়ের ছবি। শুধুই অ্যানাটমি নয়, ছবিটিতে যেন বাদুড়ের মনেরও একটা ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়। অদ্ভুত এক অবসন্ন চেহারা তার। জনৈক ভবানী দাসের আঁকা এই ছবিটি ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ ইউরো পর্যন্ত দাম উঠতে পারে বলে আশা করছেন নিলামের আয়োজকরা।

সথেবি’জ-এর সংগ্রাহক রসেল বিগত ২০ বছর ধরে একটু একটু করে সংগ্রহ করেছেন এইসমস্ত ছবি। তাঁর মূল আকর্ষণ ছিল ঔপনিবেশিক সময়ে দুই দেশের মেলবন্ধনের ইতিহাসকে বোঝা। ক্রমশ ছবিগুলি দেখে মুগ্ধ হয়ে যান তিনি। এইসমস্ত ছবি আরও বেশি দর্শকের সামনে তুলে ধরতেই তিনি এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। ১৭-২০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক শহরে, ৭-১১ অক্টোবর হংকং-এ এবং সবশেষে ২২-২৬ অক্টোবর লন্ডনে প্রদর্শিত হবে ছবিগুলি। এরপর ২৭ অক্টোবর তাদের নিলাম শুরু হবে। এত বছর পর হয়তো আর শিল্পীদের সন্ধান পাওয়া যাবে না। তবু তাঁদের শিল্পগুলো শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি পাচ্ছে, এটাও সুখবর বৈকি!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ছবি তুলতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন যেসব ফটোগ্রাফার