শিল্পীদের তুলিতে পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রদর্শনী মার্কিন রেস্তোরাঁয়

/৯

মানব সভ্যতার অস্তিত্বের কাছে বর্তমানে সবথেকে বড়ো চ্যালেঞ্জ এখন জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change)। পরিবেশ, জলবায়ু নিয়ে বিশ্বজুড়ে চর্চা চলছেই। হচ্ছে নানা আন্তর্জাতিক সম্মেলনও। কিন্তু কতটা কার্যকরী হচ্ছে সে-সব? সাধারণ নাগরিক হয়ে আমরাই বা কতটুকু আগ্রহ দেখাচ্ছি পরিবেশরক্ষায়? এবার সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই অভিনব এক শিল্প প্রদর্শনীর (Exhibition) আয়োজিত হল সান ফ্রান্সিসকোর ঐতিহাসিক রেস্তোরাঁ ‘ফোর্ট ম্যাসন চ্যাপেল’-এ (Fort Mason Chapel)।

/৯

আলোকচিত্র, পেইন্টিং, ভাস্কর্য— পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্তধরনের শিল্পকলাই প্রদর্শিত হবে আলকাত্রাজ দ্বীপে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর প্রায় ‘ঝুলন্ত’ এই রেস্তোরাঁয়। গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে ‘ল্যান্ডস এন্ড’ নামাঙ্কিত এই প্রদর্শনীটি। চলবে ২০২২ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত। সব মিলিয়ে প্রদর্শিত হবে ১৪টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের ২৬ জন শিল্পীর শিল্পকলা। দেখে নেওয়া যাক, এই প্রদর্শনীতে জায়গা করে নেওয়া তেমনই কিছু শিল্পের নিদর্শন।

/৯

ছবির ওপরের অংশে দৃশ্যমান শান্ত-নিটোল জলরাশি। আর সেই জলতলের নিচেই ভেসে বেড়াচ্ছে প্লাটিক। বাল্টিক সাগরে এই অদ্ভুত ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন ফিনিশ শিল্পী টুলা নারহিনেনের ক্যামেরা। প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমান বাল্টিক সাগরে। কিন্তু দূষণের জেরে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে সাগরের বাস্তুতন্ত্র— তা কজনই বা ভাবেন? সচেতনতা গড়ে তুলতে এভাবেই সরব হয়েছেন ফিনিশ শিল্পী।

/৯

সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গোটা বিশ্বজুড়েই বৃদ্ধি পেয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ। বিধ্বংসী ঝড়ের সম্মুখীন হয়ে বাস্তুহারা হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। ক্যানভাসে তৈলচিত্রের মধ্যে দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের এই ভয়াবহতাই ফুটিয়ে তুলেছেন সান ফ্রান্সিসকোর শিল্পী চেস্টার আর্নল্ড। তাঁর আঁকা ছবিতে ফুটে উঠছে, কীভাবে ভারসাম্য হারিয়ে অশান্ত সমুদ্র গিলে ফেলছে আস্ত জাহাজকে।

/৯

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ চাহিদা বাড়ছে বাসস্থানের। ফল, বৃক্ষচ্ছেদন। অরণ্য উজাড় করে গড়ে উঠছে সভ্যতা। বাড়ছে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির এবং বন্যপ্রাণীদের সংঘাত। ২০০৮ সালে ‘মাইগ্রেশন’ নামের তথ্যচিত্রতে সেটাই ধরতে চেয়েছিলেন মার্কিন নির্মাতা ডাগ অ্যাটকেন। সেই তথ্যচিত্র নির্মাণের সময়ই এই ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন তিনি। মোটেলের ঘরে ঢুকে পড়া পেঁচার তাণ্ডব মানব-বন্যের সংঘাতের যেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ।

/৯

২০১০ সালের ঘটনা। বিধ্বংসী বিস্ফোরণের শিকার হয় গালফ অফ মেক্সিকোতে অবস্থিত ‘ডিপওয়াটার হরাইজন’ তৈলখনি। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও, আটকানো যায়নি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ভাঙা পাইপলাইন থেকে এক মাস ধরে প্রতিদিন নির্গত হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ গ্যালন অপরিশোধিত তেল। ছড়িয়ে পড়েছিল সমুদ্রপৃষ্ঠে। ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে সেই দৃশ্য ধরেছিলেন ফটোগ্রাফার ড্যানিয়েল বেলট্রা। ‘ওয়েল স্পিল-১২’ নামাঙ্কিত সেই ছবিটিও জায়গা পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

/৯

মেঝের ওপর দাঁড় করানো বেশ কয়েকটি স্বচ্ছ রেজিনের সিলিন্ডার। তলায় ছড়ানো বালি। অ্যানা টেরেসা ফার্নান্ডেজের তৈরি এই স্থাপত্য যেন খোদ সতর্কবাণী। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য ক্রমশ বেড়ে চলেছে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা। তারপরেও হেলদোল নেই রাষ্ট্রীয় নেতাদের। আগামীদিনে এই ঘটনাই বাস্তুচ্যুত করবে কোটি কোটি মানুষকে, সেই বার্তাই দিচ্ছেন অ্যানা।

/৯

লোহার টেবিলের সঙ্গে জোড়া সার দেওয়া অসংখ্য ড্রয়ার। আর তার কচ্ছপের খোলসের আদলে তৈরি একটি ভাস্কর্য। কাছ থেকে দেখলেই বোঝা যাবে, তা আদতে জট পাকানো নানান নির্মাণপ্রকল্প। রবারের তৈরি ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন কানাডিয়ান শিল্পী ব্রায়ান জাঞ্জেন। টার্টেল দ্বীপপুঞ্জে আদিবাসীদের উচ্ছেদ, ভূমিদখল, ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের প্রভাবে পরিবেশের ধ্বংসসাধনের ছবিই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন ব্রায়ান।

/৯

কিছুদিন আগের কথা। ভয়াবহ খরার শিকার হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়া-সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক অঞ্চল। ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে সেই জলবায়ু পরিবর্তনের সেই ভয়ঙ্কর দিকটাকেই ধরেছেন শিল্পী অ্যান্ডি গোল্ডসওয়ার্দি। কাঠের ডাইনিং টেবিলের ওপর মাটির প্রলেপে ফুটিয়ে তুলেছেন রুক্ষ-শুষ্ক ভূত্বকের প্রতিকৃতি। ‘জিওফেজিয়া’-খ্যাত স্থাপত্যটি বার্তা দিচ্ছে খরার কারণে আগামীদিনে খাদ্য ও পানীয় সংকটে ডুবে যেতে চলেছে গোটা পৃথিবী।

Powered by Froala Editor

More From Author See More