প্রস্তরযুগেও প্রচলিত ছিল ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড! নিদর্শন মিলল ইউরোপে

প্রতিবছর আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার দিনটি ভারতে পালিত হয় বন্ধুত্ব দিবস হিসাবে। নিউ ইয়ারের মতোই কার্ড চালাচালি কিংবা বন্ধুর হাতে ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড পরিয়ে দেওয়া বর্তমানে রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতে। বিশেষত, স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের কাছে। তবে ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের (Friendship Band) প্রচলন আজকের নয়। এবার উত্তর-পূর্ব ইউরোপের একাধিক অঞ্চলে প্রায় ৬০০০ বছরের পুরনো ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের হদিশ পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। 

হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। সম্প্রতি, ইউরোপের বেশ কিছু অঞ্চল থেকে স্লেটের তৈরি ব্যান্ড জাতীয় অলঙ্কার উদ্ধার করেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। অলঙ্কারগুলির কার্বন ডেটিং জানান দিচ্ছে, সেগুলি তৈরি হয়েছিল অন্ততপক্ষে ৬ হাজার বছর আগে। অর্থাৎ, তখনও পর্যন্ত লোহার ব্যবহার শেখেনি মানুষ। পৃথিবীর বুকে তখন প্রস্তরযুগ। ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয় এবং টুর্কু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে জড়িয়ে ছিলেন এই গবেষণার সঙ্গে। 

সদ্য-আবিষ্কৃত এই প্রাচীন প্রস্তর অলঙ্কারগুলিকে ‘স্লেট রিং’ (Slate Ring) হিসাবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। যদিও তা আংটি বা চুড়ির মতো পরা হত না হাতে। তবে কীভাবে ব্যবহৃত হত এই অলঙ্কার? কেনই বা ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের সঙ্গে তাকে তুলনা করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা? 

শুরু থেকেই বলা যাক এই ঘটনা। সর্বপ্রথম ফিনল্যান্ডের ওনেগা হ্রদের ধারে স্লেটের তৈরি এই অলঙ্কারের বেশ কিছু টুকরো খুঁজে পেয়েছিলেন গবেষকরা। প্রাথমিকভাবে গবেষকরা মনে করেছিলেন, ভঙ্গুর স্লেট পাথরের তৈরি এই রিং ভেঙে গেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবং সময়প্রবাহে। তবে সেই ভুল ভাঙে রিং-গুলির বিশ্লেষণের সময়। এক্সআরএফ স্ক্যানিং-এ উঠে আসে অন্য তথ্য। প্রতিটি রিং-এই ভিন্ন ভিন্ন দুটি মানুষের আঙুলের ছাপ লক্ষ করেন গবেষকরা। হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্জা আহোলার অভিমত, ইচ্ছাকৃতভাবেই ভাঙা হয়েছিল স্লেটের অলঙ্কারগুলি। আদতে তা অক্ষত রিং হিসাবে ব্যবহৃত হত না। বরং, রিং-এর টুকরোই ছিল বন্ধুত্বের চিহ্ন। অলঙ্কারগুলির টুকরো টোকেন হিসাবে ব্যবহার করতেন প্রস্তরযুগের শিকারি মানুষরা। সেসময় পৃথক পৃথক জনগোষ্ঠীর রাজত্ব কায়েম থাকত অরণ্যের এক এক অঞ্চলে। ভাঙা স্লেট রিং-এর টুকরো দেখিয়ে বন্ধুত্বের সুবাদে এক অঞ্চলের মানুষরা শিকারের অধিকার পেতেন অন্যত্র। 

আরও পড়ুন
পম্পেই-এ প্রত্নসামগ্রীর সন্ধানে রোবট-কুকুর

ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেনের মতো ইউরোপের দেশগুলিতে তো বটেই, সম্প্রতি রাশিয়াতেও এই ব্যান্ডের হদিশ পেয়েছেন গবেষকরা। ফলে বলাই যেতে পারে, ইউরেশিয়া জুড়েই সেসময় গড়ে উঠেছিল এক বন্ধুত্বের নেটওয়ার্ক। যা রীতিমতো অবাক করার মতোই। সম্প্রতি ‘জার্নাল অফ আর্কিওলজিক্যাল মেথড অ্যান্ড থিওরি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র…

আরও পড়ুন
নোতরদাম গির্জার ধ্বংসাবশেষের নিচে মিলল ত্রয়োদশ শতকের কফিন! অবাক প্রত্নতাত্ত্বিকরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
গত এক শতকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ব্রিটেনে