একই সমাধিতে কুকুর ও মানবশিশু! আশ্চর্য প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার মিশরে

মিশরীয়দের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল বিড়াল। বিড়ালকে তারা পুজো করত দেবী হিসাবে। মিশরীয় দেবী বাস্টেটের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমনই কাহিনি। এমনকি পোষ্য বিড়ালের মৃত্যুতে শোকপালন করতে নিজেদের ভ্রূ কেটে ফেলত মিশরীয়রা। আর কুকুর? না, কুকুরের সঙ্গে মিশরীয়দের তেমন কোনো ঘনিষ্ঠ যোগ পাওয়া যায় না বললেই চলে। বরং, কুকুরকে পোষ্য বানানোর চল শুরু হয়েছিল ভারতে। বাগরে মিলেছিল, কুকুর পোষার প্রাচীনতম উদাহরণ।

অবশ্য এই ইতিহাস খানিকটা বদলাতে চলেছে এবার। নেপথ্যে মিশর (Egypt)। মিশরের কায়রোর নিকটবর্তী ফাইয়ুম মরুদ্যানে একটি নেক্রোপলিস থেকেই এবার আবিষ্কৃত হল আশ্চর্য এক সমাধিক্ষেত্র (Burial Site)। সংশ্লিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক খননটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের সেন্টার ফর ইজিপ্টোলজিক্যাল রিসার্চের প্রত্নতাত্ত্বিকরা। মজার বিষয় হল, মিশরজুড়ে যে-সকল সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে এতদিন, সেখানে মানুষের সঙ্গে অন্যান্য বন্যপ্রাণীকে সমাধিস্থ করার চল দেখা গেছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। সদ্য-আবিষ্কৃত এই সমাধিক্ষেত্রে সবমিলিয়ে পাওয়া গেছে ১৪২টি কুকুরের মৃতদেহ। যার মধ্যে ৮৭ শতাংশই কুকুরশাবক। আর তাদের দেহাবশেষের ওপর শুইয়ে রাখা হয়েছিল বছর আটেকের এক মানবশিশুকে। 

কার্বন ডেটিং অনুযায়ী, আজ থেকে প্রায় দু’হাজার বছর আগে সমাধিস্থ করা হয়েছিল মানবশিশু এবং কুকুরগুলিকে। অর্থাৎ, আনুমানিক প্রথম শতক কিংবা খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে তৈরি হয় এই সমাধিক্ষেত্র। তৎকালীন মিশরে মানুষের সঙ্গে যে কুকুরের সম্পর্ক ছিল, তা তো স্পষ্ট হয়েই যাচ্ছে এই আশ্চর্য প্রত্নক্ষেত্র থেকে। কিন্তু কেন এমনভাবে সমাধিস্থ করা হয়েছিল এতগুলো দেহ? প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি এখনও। 

প্রাথমিকভাবে গবেষকরা ভেবেছিলেন, শিশুটিকে সমাধিস্থ করার সময় তার পোষ্য কুকুরগুলিকে হত্যা করা হয়েছিল। তবে গবেষণার পরই সেই ভুল ভাঙে গবেষকদের। ব্যাপারটা একেবারেই তেমন নয়। কারণ, কুকুরগুলির দেহাবশেষে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। অন্যদিকে এই সমাধিক্ষেত্র থেকেই পাওয়া গেছে নীল-পলি। ফলে সম্ভাবনা থেকে যায়, নীলনদে বন্যার কারণে হয়তো মৃত্যু হয়েছিল কুকুরগুলির। শিশুটিও প্রাণ হারিয়েছিল সেই বন্যাতেই। তবে নিশ্চিতভাবে তার কোনো প্রমাণ বা সূত্র এখনও হাতে পাননি গবেষকরা। তবে আশ্চর্য এই আবিষ্কার পরবর্তীতে মিশরের সামাজিক, ধর্মীয় এবং ‘জাদুচর্চা’-র ক্ষেত্রে নতুন ধারণা তুলে ধরতে পারে বলেই মনে করছেন তাঁরা… 

Powered by Froala Editor

Latest News See More