ভুল বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, জেলের মধ্যেই খুন করলেন প্রকৃত অপরাধীকে!

যে মানুষ ফুল এবং গান ভালোবাসে না, সে ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করতে পারে। রিচার্ড ফিলিপ কিন্তু এই সবই ভালোবাসতেন। এই বিশালদেহী যুবক জেলখানার ভিতরেও গুনগুন করে গান গাইতেন। কবিতা লিখতেন। প্রেমের কবিতা। জেলের মধ্যেই তাঁর কবিতা লেখার শুরু। তবে সেই মানুষটিও ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করেছিলেন। আর সেটা করেছিলেন জেলখানার মধ্যেই। তার জন্য শাস্তিও পেয়েছেন। শাস্তির মেয়াদ শেষে মুক্তি পেয়ে ফিরে গিয়েছেন সন্তানদের কাছে। এখনও গুনগুন করে গান করেন তিনি। সেই গানের সুরে কি খানিকটা খেদ মিশে থাকে? মিশে থাকে আমেরিকার সবচেয়ে অন্ধ বিচার ব্যবস্থার কথা? হয়তো থাকে।

৪৮ বছর আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন রিচার্ড ফিলিপ। অভিযোগ ছিল ডাকাতির। উচ্চ আদালতে বারবার আপিল করার পরেও কোনো লাভ হয়নি। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেনি রিচার্ড। তিনি নিজে যেমন নির্দোষ হয়েও শাস্তি পেয়েছিলেন, তেমনই প্রকাশ্য রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল প্রকৃত দোষী। রিচার্ডের এককালের বন্ধু ফ্রেড মিশেল। তবে দৈবাৎ কখন কী ঘটে, তার কথা কে বলতে পারে?

১৯৭২ সালে রিচার্ডের যখন ২৬ বছর বয়স, তখনই একদিন মিশিগান শহরে ঘটে গেল এক দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা। খুব সামান্য অর্থই চুরি করতে পেরেছিল তারা। কিন্তু এই অস্ত্রধারী ডাকাতদের ধরতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেপ্তার করা হয় রিচার্ড ফিলিপকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানিতে তাকেই দোষী প্রমাণ করা হয়। তবে রিচার্ড জানতেন প্রকৃত দোষী কে। কিন্তু সেকথা বিশ্বাস করেনি আদালত।

এর মধ্যেই জেলের অন্ধকারে দিন কাটছিল রিচার্ডের। হঠাৎ ১৯৭৪ সালের এক বিকালে প্রহরীরা এসে জানাল, মিশেল এসেছে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। রিচার্ড তাঁর কর্তব্য ঠিক করে ফেললেন। ছুরির একটি ফলা গেঁথে দিলেন মিশেলের বুকে। সেই মিশেল, যার হাত ধরে অন্ধকার জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। যার অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে তাঁকে। এই ঘটনায় আবার স্তম্ভিত হয়ে যায় মিশিগান প্রশাসন। তবে এবার ফিলিপের সমস্ত কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় সরকার। তার বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগে যে মিথ্যে ছিল, সেকথা মেনে নেয় আদালত। খুনের শাস্তি অবশ্য পেতে হল ফিলিপকে।

২০১৯ সাল পর্যন্ত জেলখানায় বন্দি ছিলেন তিনি। তবে সেইসঙ্গে আমেরিকার আদালত স্বীকার করল, তার রায়ের মধ্যেও গলদ ছিল। আইন প্রকৃতই অন্ধ। আর এই অন্ধ আইন নির্ভুলভাবে অপরাধীকে চিহ্নিত করতে পারে না। নিরপরাধ বহু মানুষ শাস্তি পায় এভাবেই। রিচার্ড ফিলিপের ঘটনা এভাবেই ঐতিহাসিক হয়ে থেকে গিয়েছে আমেরিকার অপরাধের ইতিহাসে।

More From Author See More