র‍্যাবোব্যাঙ্কের তালিকায় বিশ্বের প্রথম ২০ ডেয়ারি সংস্থার মধ্যে স্থান আমুলের

‘আমুল দুধ ভালোবাসে ইন্ডিয়া’। তবে শুধু ইন্ডিয়া নয় তার খ্যাতি এখন আন্তর্জাতিক স্তরেও পৌঁছে গিয়েছে। সম্প্রতি আমুলের প্রাপ্তির তালিকায় যুক্ত হল আরও একটি সম্মান। নেদারল্যান্ডের র‍্যাবোব্যাঙ্ক কর্তৃক প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের প্রথম ২০টি ডেয়ারি সংস্থার মধ্যে জায়গা করে নিল আমুল। আর দেশের সমস্ত ডেয়ারি সংস্থার মধ্যে আমুলই প্রথম এই সম্মান পেল।

গুজরাট কো-অপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন, বা আমাদের পরিচিত আমুল। তার ইতিহাস নয় নয় করেও ৭৪ বছরের পুরনো। আর সেই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ সময়ের কাহিনি এবং সেইসময়ের সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে মুক্তির উপায়। সালটা ১৯৪৬। ব্রিটিশ সরকারের শাসনের শেষ দিকে দেশের অর্থনীতি তখন একেবারেই ভেঙে পড়েছে। আর তার সঙ্গে জমিদার-জোতদারদের অত্যাচারও বেড়ে চলেছে ক্রমশ। গুজরাটে তখন গোয়ালাদের জীবন প্রায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। জোতদারদের শোষণের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের সমস্তই খুইয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মোরারজি দেশাই এবং আরও কিছু নেতার পরামর্শে গোয়ালারা ঠিক করলেন তাঁরা নিজেদের সমবায় তৈরি করবেন। এভাবেই জন্ম নিল কায়রা জেলা কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউার ইউনিয়ন। আর প্রত্যেক সদস্য মিলে গড়ে তুললেন মিল্ক-স্ট্রাইক আন্দোলন। এই সমবায় সংস্থাই স্বাধীনতার পর হয়ে ওঠে গুজরাট কো-অপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন। তবে দেশের সমস্ত প্রান্তের মানুষ তাকে চিনেছে আমুল নামেই।

র‍্যাবোব্যাঙ্কের তালিকা বলছে বার্ষিক ব্যবসার নিরিখে সারা পৃথিবীর সমস্ত ডেয়ারি সংস্থার মধ্যে ১৬ নম্বর স্থানে আছে আমুল। প্রথম স্থানে আছে নেসলে। এছাড়াও দেশবিদেশের অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম আছে তালিকায়। সেখানে বার্ষিক ৫.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের লেনদেনের সৌজন্যে আমুল স্থান পেল তাদের মধ্যে। প্রসঙ্গত, প্রথম স্থানে থাকা নেসলের বার্ষিক লেনদেন ২১.১ মিলিয়ন ডলার। আমুলের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে এই সম্মানের কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, এই সম্মান আসলে গুজরাটের ৩৬ লক্ষ গোয়ালার সারা বছরের পরিশ্রমের ফল। কোম্পানির সমস্ত সাফল্যের পিছনে আসলে আছেন তাঁরাই।

প্রসঙ্গত, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে বারবার জানিয়েছেন আমুলের কর্ণধার শ্রী সামালভাই প্যাটেল। আগামী ১০ বছরে এই ক্ষেত্রে ১.২ কোটি কর্মসংস্থান হওয়া সম্ভব বলেও জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে ভারতের গতিও ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। পৃথিবীর ২১ শতাংশ দুধ বাজারজাত হয় ভারতেই। আর এর পিছনে আমুলের মতো আরও অনেক সমবায় সংস্থাই কাজ করে চলেছে। গ্রামীন অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। আর আমুলের এই সম্মান সেই অর্থনীতিকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে বলে মনে করছেন অনেকে।

আরও পড়ুন
মন্দিরের অতিরিক্ত দুধ তুলে দেওয়া হচ্ছে পথ-কুকুরের মুখে, মানবিকতার সাক্ষী মুম্বাই

Powered by Froala Editor