বিগত এক বছরে আমেরিকায় রেকর্ড পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি, প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ঘটে চলেছে একের পর এক বন্দুক হামলা। প্রতিনিয়তই প্রাণ যাচ্ছে কারোর না কারোর। এরই মধ্যেই প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। করোনা মহামারীর মধ্যেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্রের বিক্রি রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালেই আকাশ ছুঁয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা।

মার্কিন অর্থনীতির একটা বড়ো অংশই নির্ভর করে রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানাগুলির উপর। আর বিক্রির হার? তা বিগত কয়েক দশক ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। তবে আগ্নেয়াস্ত্রের বিক্রির হঠাৎ এমন বৃদ্ধি এর আগে কখনও দেখা যায়নি মার্কিন প্রদেশে। ১৯৯৮ সালে এক সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১০ লক্ষ বন্দুক। এখনও পর্যন্ত সেটিই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির রেকর্ড। কিন্তু সেই রেকর্ড ভেঙে যায় নির্বাচনের ঠিক আগে। ২০২০-র অক্টোবর মাসে একসপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১২ লক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র। 

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে যেখানে ৩২ শতাংশ মার্কিন পরিবারের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল, এখন সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশে। নর্থ-ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভার্ড ইনজুরি কন্ট্রোল সেন্টারের রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত এক বছরের ক্রেতাদের অধিকাংশই আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছেন প্রথমবারের জন্য। এমনকি তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র চালাতেও জানেন না। অথচ, এমন মানুষেরাই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, সবথেকে ঘাতক ও দামি অটোমেটেড রাইফেল। কিন্তু কারণ কী? শুধুই কি সংগ্রহের জন্য কিনছেন তাঁরা? সমীক্ষা বলছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপত্তার জন্য এই ধরনের অস্ত্র কিনছেন তাঁরা। সঙ্গে না রাখলেও লকডাউনে বাড়ির সুরক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ তাঁদের। নির্বাচনকালীন হিংসা এবং জাতিবিদ্বেষ আরও যেন ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে সাধারণের মনে। 

এতো গেল গত বছরের কথা। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্রের বিক্রি বৃদ্ধির হার চলতি বছরেও অব্যাহত রয়েছে। ‘দ্য ট্রেস’ নামের এক প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, শুধু জানুয়ারিতেই ২৩ লক্ষ অস্ত্র বিক্রি হয়েছে মার্কিন প্রদেশে। যা গতবছরের বিক্রির হারের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। সেইসঙ্গে চিন্তা বাড়াচ্ছে মার্কিন বাজারে ঘোস্ট গানের উপস্থিতি। খোলা বাজার থেকে যন্ত্রাংশ কিনে ছোট হ্যান্ডগান বা পিস্তলের সঙ্গে সংযোজন করে এই ধরনের বন্দুক বানানো হয় বাড়িতেই। ফলে থাকে না কোনো রেজিস্ট্রেশন নম্বর। অধিকাংশ বন্দুক হামলাতে এই ধরনের অস্ত্রই ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। 

আরও পড়ুন
টেক্সাস স্টেটে নিষিদ্ধ গর্ভপাত, বিতর্কের ঝড় আমেরিকার অন্যত্রও

বন্দুক বিক্রির এই রিপোর্ট প্রকাশ পাওয়ার পরেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট মহলে। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এক পক্ষ আক্রমণ করে চলেছে অন্যপক্ষকে। রিপোর্ট প্রকাশের বেশ কয়েকমাস আগেই আগ্নেয়াস্ত্রের বিক্রি নিয়ন্ত্রণের জন্য ছ’দফার এক নতুন খসড়া আইন প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অনলাইন কিংবা খোলা বাজার থেকে যাতে খুচরো যন্ত্রাংশের বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই জন্যেও নেওয়া হয়েছিল পদক্ষেপ। তবে এখনও লাল সুঁতোর ফাঁসে আটকে রয়েছে সেই আইন। কবে কার্যকর হবে সেই সাংবিধানিক পরিবর্তন? জানা নেই। তবে বাইডেনের এই আইনেরও বিরোধিতায় মুখর হয়েছে রিপাবলিকানরা। মানুষের আত্মসুরক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলেই দাবি তাঁদের। আর অন্যদিকে এই বিতর্কিত রিপোর্ট প্রকাশের খানিকক্ষণের মধ্যেই ফ্লোরিডায় বন্দুক হামলায় নিহত হন ২ ব্যক্তি। আহতের সংখ্যা প্রায় ২৫ জন! এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান যে ঠিক কী— তা এখনও পর্যন্ত নির্ধারণ করে উঠতে অক্ষম আমেরিকার ক্যাপিটল…

আরও পড়ুন
আর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়; হাতে বন্দুক তুলে নিলেন মায়ানমারের ‘বিউটি কুইন’

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চোখের জল দিয়ে তৈরি বন্দুকের গুলি, শিক্ষককে লক্ষ্য করে ছুঁড়লেন ছাত্রী!

More From Author See More

Latest News See More