ধারাবাহিক খরার শিকার আমাজন, ৫০ বছরেই পরিণত হতে পারে সাভানায়

দিনের বেলাতেও অন্ধকার সেখানে। চিরহরিৎ বৃক্ষের প্রসারিত ডালপালায় ঢেকে গেছে আকাশ। পায়ের তলায় স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে পচে যাওয়া পাতাদের স্তূপ। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম অরণ্য তথা ল্যাটিন আমেরিকার বিস্ময় আমাজন রেইনফরেস্টকে নিয়েই। সারা বছর একটানা বৃষ্টিপাতই চিরসবুজ করে রাখে বিশ্বের ফুসফুসকে। কিন্তু সেই আমাজনই এবার আক্রান্ত ভয়াবহ খরায় (Drought)। ক্রমশ বৃষ্টিপাতের মাত্রা কমছে গোটা ল্যাটিন আমেরিকা (Latin America) জুড়েই। আমাজনের (Amazon Rainforest) এই অসুখ চিরস্থায়ী হতে চলেছে বলেই আশঙ্কা গবেষকদের।

বছর তিনেক আগের কথা। ২০১৮ সাল। আকস্মিকভাবেই বৃষ্টির মাত্রা কমে গিয়েছিল ব্রাজিলে। তার আগের পাঁচ বছরের মধ্যে সেটাই ছিল সবথেকে শুষ্কতম বছর। তবে পরের বছর, ফের মেঘ ঘনিয়ে আসবে ব্রাজিলের আকাশে, তেমনটাই আশা করেছিলেন বিজ্ঞানী। কিন্তু হাল ফেরেনি। বরং, সেই থেকে টানা ৩ বছর ধারাবাহিকভাবে কমেছে বৃষ্টির মাত্রা। শুষ্ক থেকে আরও শুষ্কতর হয়ে উঠেছে ব্রাজিলের আবহাওয়া। 

শুধু ব্রাজিলই নয়, মাত্রাতিরিক্ত স্বল্পবৃষ্টিতে আক্রান্ত ইকুয়েডর, কলোম্বিয়া, পেরু, বলিভিয়া-সহ লাটিন আমেরিকার একাধিক দেশ। দেখা দিয়েছে তীব্র জলাভাব। অথচ, আমাজন উপত্যকাজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র শাখানদী, উপনদী। কিন্তু তারপরেও হঠাৎ এই চেহারা পরিবর্তনের কারণ কী?

গবেষকরা আঙুল তুলছেন মানব সভ্যতার দিকেই। হ্যাঁ, বৃক্ষচ্ছেদন। বৃক্ষচ্ছেদন নতুন কোনো ঘটনা নয়। উনিশ শতকে ঔপনিবেশিক শক্তি ল্যাটিন আমেরিকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই শুরু হয়েছিল গাছনিধনের কর্মযজ্ঞ। রবার এবং ঝুম চাষের জন্য উজাড় করে ফেলা হয়েছিল আমাজনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কিন্তু বর্তমানে বননিধনের সেই মাত্রা পৌঁছেছে চরমে। কয়েক মাসের আগের সমীক্ষাই জানাচ্ছে, প্রতি মিনিটে দুটি ফুটবল মাঠের আয়তনের বনভূমি ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে আমাজনে। শুধু কাঠের জন্যই নয়, অনৈতিক খাদান, ঝুম চাষ, গবাধি পশুর বিচরণক্ষেত্রের জন্য নির্বিচারে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে বনভূমি। আর তার ফলেই ক্রমশ খরার প্রভাব বাড়ছে দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে।

আরও পড়ুন
৩ মাসেও নিয়ন্ত্রণহীন দাবানল, আমাজনের আগুন ফেরাচ্ছে পুরনো স্মৃতি

গবেষকরা জানাচ্ছেন, উৎপাদিত জলীয় বাষ্পকে মূলত ধরে রাখত আমাজনের বৃক্ষরাশি। যা বিষুব অঞ্চল থেকে প্রবাহিত হত ল্যাটিন আমেরিকার দক্ষিণপ্রান্ত পর্যন্ত। কিন্তু বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে বর্তমানে বাষ্পের সেই ‘ফ্লাইং রিভার’-ই স্থলভাগ থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে। অন্যদিকে শুকিয়ে উঠছে আমাজন। কমছে বৃষ্টির মাত্রা। 

আরও পড়ুন
কার্বন শোষণের চেয়ে নির্গমন বেশি, আমাজনের শেষের শুরু?

আশঙ্কার বিষয় হল, একদিকে যেমন বৃক্ষচ্ছেদনের জন্য কমছে বৃষ্টির মাত্রা; ঠিক সেভাবেই বৃষ্টির অভাবে ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বনভূমি। চক্রাবর্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে খুব দ্রুতই শুষ্কভূমিতে পরিণত হবে আমাজন, সতর্ক করছেন গবেষকরা। আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে আমাজন পরিণত হতে পারে সাভানায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ব্রাজিল কিংবা ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির প্রশাসন বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় পরিবেশ সংরক্ষণে…

আরও পড়ুন
প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেই বৃক্ষচ্ছেদন রুখছেন আমাজনের আদিবাসীরা

Powered by Froala Editor