সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক সরাবে পৃথিবীর ‘অষ্টম’ মহাদেশ

বিশ্বে মহাদেশের সংখ্যা কটি? প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারাও সহজেই উত্তর দিতে পারে এই প্রশ্নের। সাতটি। তবে এই সংখ্যা বাড়তে চলেছে খুব তাড়াতাড়িই। না, প্রাকৃতিক পুনর্গঠন নয়, বরং পরিবেশ বাঁচাতে কৃত্রিমভাবেই অষ্টম মহাদেশ (8th Cintinent) তৈরির পরিকল্পনা করছেন গবেষকরা। পৃথিবীর সাতটি মহাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে প্লাস্টিক দূষণ (Plastic Pollution)। আর সেই দূষণকে নিয়ন্ত্রণে আনতেই এমন উদ্যোগ গবেষকদের।

অবশ্য মহাদেশ বললেও, একটি দ্বীপের আয়তনের থেকে বেশি নয় একটি কৃত্রিম মহাদেশ। মূলত, তা একটি ভাসমান ল্যাবরেটরি। যা সমুদ্রে নিক্ষেপিত প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ তো বটেই, তার প্রক্রিয়াকরণও করবে আগামীদিনে। সম্প্রতি, এই উদ্ভাবনী ও সমুদ্র স্থাপত্যের পরিকল্পনাটি জিতে নিয়েছে গ্র্যান্ড প্রিক্স পুরস্কার। 

গোটা পরিকল্পনাটি লন্ডনের জাহা হাদিদ আর্কিটেক্টের ডিজাইনার লেংকা পেত্রাকোভার মস্তিষ্কপ্রসূত। তবে আজ নয়, বেশ কয়েক বছর আগে ভিয়েনার ওসান পলিউশন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার সময় থেকে এই স্থাপত্যের নীল-নকশা তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন লেংকা। বছর খানেক আগে সম্পূর্ণ হয় সেই কাজ। তৈরি হয়ে গেছে প্রোটোটাইপও।

লেংকা জানাচ্ছেন, জাহাজের প্রযুক্তির ওপরেই তৈরি হবে ‘ওয়াটার লিলির’-র আকৃতির এই ভাসমান মহাদেশ। এবং তা হবে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। কোনোরকম জীবাশ্ম জ্বালানি কিংবা পারমাণবিক শক্তি লাগবে না এই মহাদেশে। বায়ুশক্তি এবং সমুদ্র স্রোতকে কাজে লাগিয়েই শক্তি উৎপাদন করবে এই কৃত্রিম মহাদেশ। সেই শক্তি কাজে লাগিয়েই প্লাস্টিক সংগ্রহ এবং তা পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করবে অষ্টম মহাদেশে থাকা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। সমুদ্র স্রোতকে কাজে লাগিয়েই মহাসমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়াবে এই মহাদেশ। তাছাড়াও আলাদাভাবে সেখানে বন্দোবস্ত থাকবে কোয়ার্টারের। থাকছে আধুনিক প্রযুক্তির ল্যাবরেটরিও।  সমুদ্র সংক্রান্ত গবেষণার কাজে এই মহাদেশকে স্টেশন হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। 

প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের কথাটি মাথায় রেখেই এই ভবিষ্যৎ মহাদেশের নামকরণ করা হয়েছে ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর সমুদ্রে নিক্ষেপিত হয় ৮০ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য। আর এই প্লাস্টিক দূষণ প্রাণ নেয় অন্ততপক্ষে ১ লক্ষ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী এবং কচ্ছপের। সেইসঙ্গে ১০ লক্ষের বেশি সামুদ্রিক পাখি শিকার হয় প্লাস্টিকজাত বর্জ্যের। ফলে, পরিবেশের ভারসাম্য ফেরাতে এমন একটি বন্দোবস্ত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল, তা বলার অপেক্ষা থাকে না।

ইতিমধ্যেই লেংকার এই পরিকল্পনাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞানীরা। অর্থ বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছেন বেশ কিছু শিল্পপতিও। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই প্রকল্প যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ হওয়ায় মহাদেশ তৈরির পরিকল্পনা এখনও সোনার পাথরবাটি বিজ্ঞানীদের কাছে। গ্র্যান্ড প্রিক্স পুরস্কার জেতার পর, টেসলা সিইও তথা বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের এলন মাস্কের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন লেংকা     পেত্রাকোভা। সেখান থেকে অর্থের যোগান পেলেই, শুরু হয়ে যেতে পারে প্রকল্প বাস্তবায়নের কর্মসূচি। অর্থায়নে বেশ খানিকটা সময় লাগলেও, বিশ্বের অষ্টম মহাদেশ পেতে খুব বেশি দেরি নেই আর…

Powered by Froala Editor

Latest News See More