নদী দূষণের তাৎক্ষণিক হার, এমনকি দূষকের উৎসও জানাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা!

কৃত্রিম সার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, নিকাশি ব্যবস্থার দূষিত জল, প্লাস্টিক এবং অন্যান্য দূষক ক্রমাগত মিশে চলেছে নদীতে। বিষিয়ে তুলছে নদীর জলকে। কোন নদীর জল কতটা দূষণের শিকার, তা জানতে প্রায় সব দেশেই বিশেষ সমীক্ষা করা হয় প্রতি বছর। ভারতেও অন্যথা হয় না তার। তবে সেই সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতে আসতেই দূষণের মাত্রায় দেখা দেয় বড়ো পরিবর্তন। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে দূষণ ঠেকানো সম্ভব হয় না মানুষের পক্ষে। এবার এই সমস্যারই ইতি টানতে চলেছে এআই (AI)। 

হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নির্মাণ করল ব্রিটিশ টেক-সংস্থা ‘সিজিআই’। এই বিশেষ বুদ্ধিমত্তা শুধু নদীতে মিশে থাকা দূষকদের উপস্থিতি ও হারই জানাবে না, সঙ্গে দূষণ ঠাকানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে স্থানীয়দের— সে-ব্যাপারেও ভবিষ্যদ্বাণী করবে এই এআই। কিন্তু কীভাবে সম্ভব হচ্ছে সেটা? 

বিশেষ ভাবে নির্মিত একটি যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটিকে। মূলত নদী এবং স্থানীয় শস্যক্ষেতে স্থাপন করতে হবে এই যন্ত্রকে। এই যন্ত্রের মধ্যেই রয়েছে স্বয়ংক্রিয় রাসায়নিক বিশ্লেষক। যা নদীর জল এবং কৃষিক্ষেতের মাটি পরীক্ষা করে ক্রমাগত জানান দিতে থাকে সেখানে দূষকের উপস্থিতি। পাশাপাশি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত স্যাটেলাইটের সঙ্গেও যুক্ত। ফলে বৃষ্টিপাত, ভৌগলিক অবস্থান ও অন্যান্য পরিবেশগত বিষয়ের রিয়েলটাইম তথ্যও উপলব্ধ তার কাছে। এই দুইয়ের সংমিশ্রণেই এই বিশেষ যন্ত্র জানাবে কোন কোন রাসায়নিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে নদী দূষণ এবং সেই দূষণের উৎস ঠিক কোথায়। দূষকের উপস্থিতির হার নিরাপদ মাত্রার কাছাকাছি পৌঁছালেই বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা দিতে থাকবে এই যন্ত্র। পাশাপাশি এও জানাবে, কোন কোন পদক্ষেপ নিলে নিয়ন্ত্রণে আসবে দূষণ। 

দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডে অবস্থিত নর্থ ডেভন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ। ৫৫ বর্গ মাইলের এই সংরক্ষিত এলাকাই বিগত কয়েক বছরে শিকার হয়েছে ভয়াবহ জল দূষণের। এই রিজার্ভের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত মার্টিন নদী, দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের অন্যতম মিষ্টি জলের উৎস। অথচ, এই নদী লোকালয় এবং কৃষিক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায়, তার জল ক্রমশ বিষিয়ে উঠছে বিভিন্ন রাসায়নিকের প্রভাবে। এমনকি গত ২০১৮-১৯ সালে এই নদীর জলে সাঁতার কাটাও নিষিদ্ধ করেছিল প্রশাসন। এই নদীর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রাথমিকভাবে স্থাপন করা হচ্ছে ব্রিটিশ সংস্থা ‘সিজিআই’-এর তৈরি অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটিকে। গবেষকদের কথায়, ট্রায়ালে ইতিমধ্যেই ৯০ শতাংশ সাফল্য পেয়েছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই যন্ত্র ও প্রোগ্রামিং-এর কার্যকারিতা আরও বাড়তে থাকবে বলেই অভিমত তাঁদের। এই পাইলট প্রোজেক্ট সফল হলে, পরবর্তী ব্রিটেনের অন্যত্রও স্থাপিত হয় এই বিশেষ যন্ত্র। বলার অপেক্ষা থাকে না, এই নতুন প্রযুক্তি দূষণ প্রতিরোধে এক বড়ো হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে মানব সভ্যতার…

Powered by Froala Editor