অজাত সন্তানকেও সমাধিস্থ করার অধিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ দম্পতি

যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়নি, তার উপর বাবা-মায়ের অধিকার ঠিক কতটা? ব্রিটেনের আদালতে সেই অধিকার দাবি করেই দ্বারস্থ হলেন এক দম্পতি। আজ থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে তাঁদের জননকোষ থেকেই জন্ম নিয়েছিল ৯টি ভ্রূণ। আসলে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়ায় সবসময়ই এমন অতিরিক্ত ভ্রূণ জন্ম নেয়। তবে ইলায়েন মেয়ার এবং তাঁর স্বামী ব্যারি প্রিজেন্ট চেয়েছিলেন, প্রতিটি ভ্রূণই যেন বেঁচে থাকে। তাদের সংরক্ষণের যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সময়মতো সেই ভ্রূণের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া গেল না। পুরো ঘটনায় ‘ওম্যান অ্যান্ড ইনফ্যান্ট হসপিটাল’-এর গাফিলতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এই ব্রিটিশ দম্পতি।

কয়েক মাস আগেই হঠাৎ একটি চিঠি হাতে পান ইলায়েন মেয়ার। চিঠিতে তাঁকে ‘ডিয়ার পেশেন্ট’ বলে সম্মোধন করা হয়। তবে বিগত দুই দশক ধরে কোনো ধারাবাহিক চিকিৎসার মধ্যে যেতে  হয়নি তাঁকে। ১৯৯৬ সালে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ওম্যান অ্যান্ড ইনফ্যান্ট হসপিটালে। অধিক বয়সে বিবাহের কারণেই সন্তানের জন্ম দিতে সমস্যা হচ্ছিল বারবার। তবে ইন-ভিট্রো পদ্ধতিতেও সাফল্য পেতে দেরি হয়। প্রথম দুটি সাইকেলে প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়। তৃতীয় সাইকেলের সময় অবশ্য সবকিছু ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হয়। মেয়ার এবং প্রিজেন্টের সংসারে জন্ম নিল ফুটফুটে নোয়া। তাঁদের প্রথম এবং একমাত্র পুত্র। না, এই একমাত্র কথাটা হয়তো ঠিক নয়। কারণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখনই জানায়, এই তিনটি সাইকেল যখন চলছিল, তখন আরও ৯টি ভ্রূণ জন্ম নিয়েছে মেয়ার ও প্রিজেন্টের জননকোষ থেকে। ২০০০ সালে একটি আলোচনায়  দুই পক্ষ স্থির করেন, আপাতত হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতেই সংরক্ষণ করা হবে প্রতিটি ভ্রূণ। মেয়ারের পক্ষে তখন আবার সন্তান ধারণ সম্ভব ছিল না। কিন্তু শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে আবারও তাঁর জরায়ুতে সন্তান স্থাপন করা হবে।

ইলায়েন মেয়ার জানিয়েছেন, এতদিন ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে এসেছেন তাঁর সন্তানরা সুরক্ষিত আছে। এমনকি কিছুদিন আগেই এক দ্বিতীয় চিঠিতে তাঁকে জানানো হয়, তিনি যদি আরও বেশিদিন ভ্রূণ সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে তাঁকে ৫০০ মার্কিন ডলার দিতে হবে। এই অর্থ দাবি করাতেই তাঁর সন্দেহ হয়। তখন ভ্রূণগুলি দেখতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি হয় না। বহু জটিলতার পর কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে, মাত্র দুটি ভ্রূণ জীবিত আছে। বাকিগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে সেই দুটি সংরক্ষিত ভায়াল দেখেও চিকিৎসক দম্পতির বুঝতে বাকি থাকে না যে এগুলিও বাইরের বাতাসের সংস্পর্শে এসে প্রাণশক্তি হারিয়েছে।

শুধুই কর্তব্যে গাফিলতি নয়, মাতৃত্বের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগও তুলেছে ইলায়েন মেয়ার। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই পরিস্থিতিতে আদালত কী রায় দেবেন, তা জানেন না দম্পতি। তবে তাঁরা শুধু চান, মৃত হলেও ভ্রূণগুলি যেন তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ভূমিষ্ঠ না হলেও তারা তাঁদের সন্তান। আর কিছু না হোক, তাদের সমাধিস্থ করার অধিকার যেন পান বাবা-মা।

আরও পড়ুন
সমাধিফলকে নিজের নাম! আদালতের দ্বারস্থ মহিলা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সমলিঙ্গ দম্পতিদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ জাপানের আদালতে