‘যৌন সেবাদাসী’দের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য জাপান সরকার, রায় দক্ষিণ কোরিয়া আদালতের

ইতিহাস মুছে গিয়েও যায় না। ইতিহাসের ক্ষত বুকে নিয়েই বেঁচে থাকে বর্তমান। সম্প্রতি শিরোনামে উঠে এসেছে এমনই এক অন্ধকার ইতিহাস। দক্ষিণ কোরিয়া আদালতের রায়কে ঘিরে রীতিমতো তিক্ত হয়ে উঠেছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক। আদালতের রায় অনুযায়ী দুই বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপ বাহিনী যতজন মহিলার উপর যৌন নিগ্রহ চালিয়েছে, তাদের মধ্যে প্রত্যেক জীবিত মহিলাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে জাপান সরকারকে। অন্যদিকে টোকিওর দাবি, ইতিমধ্যে ১৯৬৫ এবং ২০১৫ সালে চুক্তি অনুযায়ী সমস্ত বিষয়ের মীমাংসা হয়ে গিয়েছে। আর তাই নতুন করে ক্ষতিপূরণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

সমস্ত কাহিনির শুরু ১৯১০ সালে। সেবছর জাপ বাহিনী সমগ্র কোরিয়াকে দখলে আনে। আর ঔপনিবেশিকতার অনিবার্য ফলশ্রুতি হিসাবে শুরু হল অকথ্য নির্যাতন। বিশেষ করে যৌন নির্যাতন। সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিকৃত যৌন-লিপ্সা মেটাতে গায়ের জোরে বন্দি করা হতে থাকে বহু মহিলাকে। তাঁদের পরিচয় হয় ‘যৌন সেবাদাসী’। স্বাধীনতার প্রশ্ন বাতুলতা মাত্র। একটানা ৩৫ বছর ধরে চলেছিল এই নির্যাতন। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চূড়ান্ত পরাজয়ের পর অবস্থার পরিবর্তন হল। জাপান ক্ষমতা হারানোর পর অবশেষে কোরিয়া স্বাধীন হলেও দেশ দুভাগ হয়ে গেল। অবশ্য সেটা ভিন্ন কাহিনি।

ঐতিহাসিকদের মতে, এই ৩৫ বছরে অন্তত ২ লক্ষ কোরিয়ান মহিলাকে বন্দি করেছিল জাপ বাহিনী। ইতিহাসের সেই কুখ্যাত অধ্যায় আজ প্রায় বিস্মৃত। কিন্তু সেই বিভীষিকার স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছেন ১৬ জন মহিলা। এর মধ্যেই ১৯৬৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক চুক্তিতে ঠিক হয় সমস্ত ঔপনিবেশিক ইতিহাস ভুলে যাওয়া হবে। ২০১৫ সালে নতুন করে চুক্তি মারফত দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা দেখা দেয়। কিন্তু ঠিক এই সময়েই ১২ জন মহিলা ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রায় ৬ বছর ধরে মামলা চলাকালীন তাঁদের ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে অবশেষে আদালতের রায়ে খুশি অভিযোগকারিণীরা।

যদিও জাপানের মুখ্য ক্যাবিনেট সেক্রেটারি কাৎসুনোবু কাটো জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে চুক্তিতে যখন সমস্ত মীমাংসা হয়ে গিয়েছে তখন আর ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন ওঠে না। তবে কোরিয়ান আদালত সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, রাষ্ট্রীয় চুক্তিতে ব্যক্তিগত ক্ষতিপূরণের মীমাংসা হয় না। বিশেষ করে মহিলারা যখন নিজেরাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, তখন জাপান সরকার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। অবশ্য এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথাও জানিয়ে দিয়েছে জাপান। শতাব্দীপ্রাচীন এই ইতিহাসের মীমাংসা কীভাবে হয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সকলে। বেশিরভাগই তো প্রাণ হারিয়েছে। বাকিরাও কি সুবিচার পাবেন?

Powered by Froala Editor