ভাগ্য বদলাবে জ্যাকেল হর্ন! ‘শিং’-এর লোভে চোরাশিকারিদের হাতে মৃত্যু অজস্র শিয়ালের

‘শিং নেই তবু নাম তার সিংহ’— এই অসাধারণ ভাবনার সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন কিশোর কুমার। ব্যাপারটা কিন্তু ভেবে দেখার মতোই। কিন্তু চেহারা তো বটেই, শিয়ালের তো নামেও শিং নেই! তাহলে কোথা থেকে এল ‘জ্যাকেল হর্ন’, যার শুদ্ধ বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘শৃগাল শৃঙ্গ’? কোনো উত্তর নেই। না থাকলেও, এই নামে নেটে সার্চ করলে আপনার কাছে অনেক উদাহরণ চলে আসবে। আর এখানেই লুকিয়ে আছে অন্ধকার; অপরাধ আর অন্ধবিশ্বাসের বিষাক্ত কুয়ো…

বাদামি রঙের একটি জিনিস। ঘন লোমের ভেতর শক্ত একটা ডেলা। তারই নাম ‘জ্যাকেল হর্ন’। ভারতে আবার এটি পরিচিত ‘শিয়ার শিঙ্ঘি’, ‘গিদার শিঙ্ঘি’, ‘নারি কম্ভু’ নামে। নাম আলাদা হলেও, দিনের শেষে জিনিসটি সব জায়গায় একই। আর এর জন্যই কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করছে মানুষরা। এতে নাকি ভাগ্য ভালো হবে! জ্যোতিষ গবেষণা হবে! বহুল প্রচলিত অনলাইন সাইটগুলিতে রীতিমতো জাঁকিয়ে বিক্রি হচ্ছে এগুলো। আর এই কুসংস্কারের আড়ালে শেষ হচ্ছে শিয়ালদের জীবন। আর তা ঘটছে ভারতেও, আমাদের চোখের সামনে।

এই বিশেষ বস্তুটি আসলে একটি বানানো জিনিস। মাটি আর শিয়ালের লোম, চামড়া দিয়ে এটিকে তৈরি করা হয়! তারপর শিয়ালের শিং বলে বাজারে বিক্রি করা হয়। এই পুরো কাজটার জন্য চোরাশিকারিদের বিশেষ পছন্দ গোল্ডেন জ্যাকেল। স্রেফ এই অন্ধবিশ্বাসের জন্য, এদের প্রাণ হারাতে হচ্ছে। ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু এর জন্য ২০১৩ থেকে ২০১৯— এই বিস্তৃত সময় ১২৬টি শিয়ালের চামড়া, আটটা লেজ, মাথার খুলি এবং ৩৭০টিরও বেশি ‘জ্যাকেল হর্ন’ উদ্ধার করা হয়েছে। সঙ্গে ছিল দুটো জীবন্ত শিয়ালও। তার মানে, কত শিয়াল এর আগে মারা গেছে, এবং এখনও যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, এই পরিসংখ্যান শুধু ভারতের। একবিংশ শতকের এই বৈজ্ঞানিক বিস্ফোরণের সময় এইরকম ঘটনা আমাদের পিছিয়ে দেয় অনেকটা। বন্যপ্রাণও কতটা রক্ষা পাবে, সেটাও ভেবে দেখি না। আমাদের সবার ওপরই কি দায় বর্তায় না?

Latest News See More