‘একটা ঝড় যেন বদলে দিল পুরো জঙ্গলের চেহারা, গ্রামজুড়ে শুধুই হাহাকার’

চন্দ্রকোণা টাউন থেকে গ্রামের রাস্তা ধরে আসতে আসতে দুদিকে চোখে পড়ে চাষের জমি। মাঝেমধ্যে একটা-দুটো কুটির। মাঠ ছেয়ে আছে ফসলে। হ্যাঁ, পাটাইশোল গ্রামে পৌঁছনোর পথে এমনই দৃশ্য ছিল এই সেদিন পর্যন্ত। ‘পাটাইশোল’ নামটা অপরিচিত লাগছে কি? লাগতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানার অধীন জঙ্গলের পাশে প্রত্যন্ত এক গ্রাম পাটাইশোল। খুব একটা বিখ্যাত নয়। কিন্তু আমরা যারা এই গ্রামেই বড়ো হয়েছি, তাদের কাছে পাটাইশোলই শেষ আশ্রয়। চোখের সামনে তছনছ হয়ে যাওয়ার সাক্ষীও আমরা। সৌজন্যে আমফান।

<!-- wp:gallery {"ids":[14832],"align":"center"} --><!-- /wp:gallery -->

সেদিন সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। স্কুলঘরে আশ্রয় নিয়েছিল মানুষ। ছিল রান্নার ব্যবস্থাও। গ্রামে বেশিরভাগই যেহেতু কাঁচাবাড়ি তাই দুপুর থেকেই আতঙ্ক ছিল। মানুষের প্রাণ না হয় বাঁচানো গেল, কিন্তু বাড়িগুলোর কী হবে? আশঙ্কা ভুল ছিল না আমাদের। ঝড়ে উড়ে গেছে অনেকের মাথার ছাউনি। স্কুলঘরের চালাও।
আমাদের বাড়ির সামনেই জঙ্গল। বিখ্যাত গড়বেতার এই জঙ্গল ঘেঁষেই বেড়ে ওঠা আমাদের। অজস্র গাছের মধ্যে। লালচে মাটি আর সবুজ দিগন্ত বরাবর ভরসা জুগিয়েছে আমাদের। প্রকৃতির এই কোলই যেন সরে গেল সেদিন। এই ক্ষতির আশঙ্কা কেউই বোধহয় আঁচ করতে পারেনি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় তিন হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে ঝড়ে। বেশিরভাগই আকাশমনি এবং ইউক্যালিপটাস। সেইসঙ্গে গৃহহীন হয়েছে অনেক পাখিও।

<!-- wp:gallery {"ids":[14835],"align":"center"} --><!-- /wp:gallery -->

বনদপ্তরের আধিকারিক পরের দিন সকালে গ্রামে মিটিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। তবে এখনও ইলেকট্রিক তারের উপর বিপজ্জনক ভাবে পড়ে আছে একাধিক গাছ। আগাম সতর্কতা থাকায় অধিকাংশ ধানই কাটা হয়ে গিয়েছিল বলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কম। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন পত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে।

<!-- wp:gallery {"ids":[14836],"align":"center"} --><!-- /wp:gallery -->

তবে এসবই বাহ্যিক ক্ষতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ। গ্রামের চেহারা যেভাবে বদলে গেল, গাছের ছেয়ে থাকা যেভাবে শূন্য হয়ে গেল, তার কি কোনো ক্ষতিপূরণ হয়? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি আমরা…

Powered by Froala Editor

More From Author See More