ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসছে রকেট, মর্টার। আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করে চলেছে বোমারু বিমান। গাজার অধিকাংশ বাড়িই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে সেই ধ্বংসযজ্ঞে। তাই প্রাণ বাঁচাতে একমাত্র ভরসা শরণার্থী শিবির। ইজরায়েলি আক্রমণ থেকে বাঁচতে তাই ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন ১০ হাজার প্যালেস্তাইনি। কিন্তু সেখানেও শেষ রক্ষা হল না। বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে গেল সেই ক্যাম্পও। প্রাণ গেল একই পরিবারের দুই মহিলা-সহ আট জন শিশুর।
ঘণ্টা সাতেক আগে এমনই নৃশংস ধ্বংসলীলা চলল গাজা উপত্যকার শাটি শরণার্থী শিবিরে। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘর্ষের পঞ্চম রাতে এই শিবিরে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন গাজার বাসিন্দা আবু হাতাব। শনিবার ভোরের আলো ফুটছে সবে। ঘুম ভাঙেনি কারোরই। তার মধ্যেই প্রাণ হারালেন তাঁর পরিবারের ১০ সদস্য। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে তাঁর ৫ মাসের শিশু সন্তান ওমর। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে সদ্যজাত শিশুটি।
ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে দ্রুত উদ্ধারের কাজে হাত লাগিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে মনে করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। পাশাপাশি আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। কয়েকজনের অবস্থা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। তাঁদের ভর্তি করা হয়েছে ক্যাম্প সংলগ্ন আল-শিফা হাসপাতালে।
গাজার মোট আটটি শরণার্থী শিবিরের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম শিবির শাটি। তবে এটি সবথেকে জনঘনত্বপূর্ণ ক্যাম্প। মাত্র অর্ধেক বর্গকিলোমিটার মধ্যেই সেখানে বসবাস ৮৫ হাজার নাগরিকের। ফলত, এভাবেই আক্রমণ চলতে থাকলে আরও ভয়াবহ হতে পারে পরিস্থিতি। সেই আশঙ্কাতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এই শিবিরে।
আরও পড়ুন
ভয়াবহ যুদ্ধে রক্তাক্ত ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন, গাজায় মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ১১৯
যদিও ইজরায়েলের পক্ষে ঘোষণা করা হয়েছে বেসামরিক নাগরিকরা তাঁদের লক্ষ্যবস্তু নয়। মূলত গাজায় নিয়ন্ত্রণকারী জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গেই তাঁদের সংঘর্ষ। কিন্তু হামাসের জঙ্গিরা জাতিসংঘের শরণার্থী শিবিরের আশ্রয় ও সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। তাই সেই কারণেই এই আক্রমণ। ইজরায়েলের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘ভিত্তিহীন’ বলে তোপ দেগেছে জাতিসংঘের আধিকারিকেরা। জনবহুল অঞ্চলে ক্রমাগত আঘাত হানাকে অভিহিত করা হয়েছে ‘গণহত্যা’ হিসাবে।
আরও পড়ুন
ইজরায়েলের রাষ্ট্রপতি হওয়ার অনুরোধ, প্রস্তাব ফেরালেন আইনস্টাইন
অন্যদিকে এদিন ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও ইজরায়েলি হামলায় মারা গেছেন ১৩ জন সাধারণ নাগরিক। শনিবার ভোরে গোটে প্যালেস্তাইন-জুড়ে ধারাবাহিক শেল-বর্ষণের পর মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ১৪০। যার মধ্যে রয়েছে ৪০টি শিশু। তাছাড়াও আহত কমপক্ষে ১০০০ জন মানুষ। হামাসের রকেটে প্রাণ গেছে ৬ জন ইজরায়েলিরও। এত রক্তবন্যার পরেও অব্যাহত যুদ্ধ-পরিস্থিতি। বেড়ে চলেছে দুই পক্ষের সহিংসতাই। আর এই সামরিক দ্বন্দ্বের মধ্যেই নীরবে চলে যাচ্ছে তরতাজা কিছু প্রাণ। যারা আদতে যুদ্ধ চায়নি কোনোদিনই…
Powered by Froala Editor