ট্যাক্স না-দেওয়ায় পুলিশি হানা, ঘরছাড়া অবস্থায় মৃত ৫৭ নন্দীগ্রামবাসী

আচমকা পুলিশি হানা। ঘরছাড়া নন্দীগ্রামের কয়েকশ গ্রামবাসী। দীর্ঘ প্রবাসের মধ্যেই মৃত্যু হল একজন শিশু সহ ৫৭ জনের। কী ভাবছেন? নির্বাচনের সময় আবারও কোনো অশান্তির সূত্রপাত হল? গত কয়েকদিন ধরেই আবারও সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে নন্দীগ্রাম। উঠে আসছে ১৪ বছর আগের গণহত্যার স্মৃতি। কে দায়ী, কার ষড়যন্ত্র, উঠছে সেইসব প্রশ্ন। তবে নন্দীগ্রামে পুলিশি উৎপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। আজ থেকে প্রায় ৮৯ বছর আগের তেমনই এক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় প্রবাসী পত্রিকার পাতায়।

১৩৩৯ সনের প্রবাসী পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, “মেদিনীপুর জেলায় অনেক দিন হইতে যেরূপ ঘটনা ঘটিয়া আসিতেছে বলিয়া কাগজে দেখা যায়, এই সংবাদগুলি তাহারই নমুনা।” অর্থাৎ ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং মেদিনীপুরের বিভিন্ন গ্রামে এমন পুলিশি উৎপীড়ন রীতিমতো স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এক্ষেত্রে, তৎকালীন ‘অ্যাডভান্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত ইংরেজি একটি খবরের বিবরণ তুলে ধরেছিল 'প্রবাসী'।

ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন? নন্দীগ্রামের গ্রামবাসীরা চৌকিদারি ট্যাক্স না দেওয়ার কারণেই পুলিশ অভিযান চালায়। আর সেই অভিযানের সময় দেখা যায় আগে থেকেই পুলিশ আসার কথা জানতে পেরে অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। সংখ্যাটা কত, তার অবশ্য কোনো হিসাব নেই। তবে একটি গোটা গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে। মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে ঠিকই, তবে গোয়ালে গরু বা খামারে মুরগি তখনও বাঁধা রয়েছে। খাজনা ফেরত না পেয়ে সেগুলিই আটক করে পুলিশ।

‘অ্যাডভান্স’ পত্রিকায় একটি হিসাব দেওয়া হয়েছে, এক একজন ব্যক্তির বকেয়া খাজনার পরিমাণ কত। আর সেই খাজনার সাপেক্ষে কত মূল্যের গবাদি পশু বা হাঁস-মুরগি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেই হিসাবও দেওয়া হয়েছে। উত্তমী বালা মাইতি নামের জনৈক গৃহকর্ত্রীর দেয় খাজনার পরিমাণ ছিল ৬ টাকা। তার পরিবর্তে তাঁর দুটি বলদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তৎকালীন বাজারে যার মূল্য ২৫ টাকা। আবার ধরণীধর কর নামের এক ব্যক্তির ২ টাকা বাকি থাকার জন্য তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে ১৫ টাকার একটি গাই গরু ছিনিয়ে নেয় পুলিশ।

আরও পড়ুন
মাথার দাম ১৭ হাজার মার্কিন ডলার, মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে আমাজন-রক্ষার লড়াই ওসভালিন্দা-র

অবশেষে গ্রামবাসীরা ফিরেও এসেছিলেন। প্রাথমিকভাবে অবশ্য তাঁরা ঘর ছেড়ে সুন্দরবনে এবং আশেপাশের অন্যান্য থানায় আশ্রয় নেন। পুলিশ চলে যাওয়ার কথা জানতে পেরে ফিরে আসেন ধীরে ধীরে। কিন্তু পলাতক থাকাকালীন অনেকেরই স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে। প্রবাসে মৃত্যু হয়েছে ৮ জন শিশু, ১০ জন পুরুষ এবং ৩৮ জন মহিলার। এমনকি একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা পালানোর সময়েই এক সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেই শিশুটিরও মৃত্যু হয়। ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় শুধু বলা হয় ‘এই সংবাদগুলি মর্মভেদী’। 

কিন্তু তার চেয়েও বড়ো বিস্ময়ের মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস। অসংখ্য মৃত্যু, স্বজন হারানো, মায়েদের শূন্য কোলের কাতর বেদনার মধ্যে দিয়েই বারবার ঘুরে দাঁড়ায় মানুষ। ১৪ বছর আগেও যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল নন্দীগ্রামের মানুষ। ১৯৩২-৩৩ সালেও একইভাবে মানুষ সব হারিয়েও উঠে দাঁড়িয়েছিল।

আরও পড়ুন
খুন, নাকি আত্মহত্যা? বাংলাদেশের ‘মহানায়ক’ সালমান শাহের মৃত্যুরহস্য জানা যায়নি ২৩ বছরেও

তথ্যসূত্রঃ প্রবাসী, ১৩৩৯

ছবি - প্রতীকী

আরও পড়ুন
ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে তছনছ লেবাননের রাজধানী বেইরুট, মৃত ৫০, আহত হাজারেরও বেশি

Powered by Froala Editor

More From Author See More