কাচের ওপাশে রাখা একটি মুখোশ। কিন্তু এটা কার বা কাদের মুখোশ? ঠিক যেন একটি বড়ো পাখির মাথা কেটে এনে রাখা হয়েছে। বড়ো বড়ো চোখ, সামনে আবার ইয়া বড়ো একটা ঠোঁট। এরকম কিম্ভূতকিমাকার জিনিসটি কারা ব্যবহার করত? উত্তরটা যদি হয় আগেকার দিনের প্লেগের ডাক্তাররা, খুব অবাক হবেন নিশ্চয়ই? কিন্তু ইতিহাস অন্তত তেমনটাই বলছে। এমনই জিনিসের সন্ধান পাওয়া যাবে জার্মান মিউজিয়াম অফ মেডিক্যাল হিস্টোরিতে।
আরও পড়ুন
৪০০টি শিশুহত্যা সঙ্গে জড়িত তিনি, মহিলা সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে তোলপাড় ইংল্যান্ডে
ষোড়শ শতকের কথা। ইউরোপের নানা জায়গায় মাঝে মাঝেই মহামারী শুরু হয়ে যেত। আর যেসব রোগের কারণে হত, তাদের একটি হল প্লেগ। মারা যেত হাজার হাজার মানুষ। রাস্তায় পড়ে মৃতদেহ, এমনই বীভৎস দৃশ্য চারদিকে। কিন্তু প্রতিরোধের উপায়? মানুষকে আক্রান্তের থেকে, এলাকা থেকে দূরে থাকতে হবে। একরকমের ‘কোয়ারান্টাইন’ই বলা যায়। কিন্তু ডাক্তাররা? মনে রাখতে হবে, সেটা মধ্যযুগ। ডাক্তারির আধুনিক নিয়ম, জিনিস কিছুই আবিষ্কার হয়নি। ঠিক করা হল, ডাক্তারদের তো যেতেই হবে কিছু করার নেই। কিন্তু বাইরের বাতাস যাতে তাঁদের শরীরে না ঢুকতে পারে, সেজন্য ভালো পোশাক আর মাস্কের বন্দোবস্ত করা দরকার। তখনই এই অদ্ভুত মাস্কটি তৈরি করা হল।
আরও পড়ুন
মিউজিয়ামে রাখা ডেড সী স্ক্রোলের প্রতিটি খণ্ডই নকল, গবেষণায় চাঞ্চল্য
সম্পূর্ণ ঢেকে রাস্তায় বেরোতে হত চিকিৎসকদের। মাস্কের ওপরে চোখের জায়গাটা কাচ দিয়ে ঘেরা থাকত। আর নাকের জায়গায় থাকত পাখির লম্বা ঠোঁটের মতো একটি গঠন। কাজটাও সেরকমই ছিল। শ্বাস নেওয়ার জন্য দুটো ফুটো করা থাকত। সেই ফুটোর চারিদিকের প্রকোষ্ঠে থাকত সুগন্ধি দ্রব্য; যা কিনা বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে। কাজেই, বাইরের ‘দূষিত’ বায়ু যাতে ভেতরে না ঢোকে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। তবে এমন মাস্ক পরার পর বাকি লোকেদের অবস্থা কী হত সেটা দেখে, তা খানিক অনুমান করাই যায়!
আরও পড়ুন
শ্যামবাজারের নামকরণের পিছনে লুকিয়ে কোন ‘শ্যাম’? উত্তর আজও রহস্যাবৃত
এমনই একটি মাস্ককে বহু বছর ধরে সংরক্ষিত করা হচ্ছে জার্মানির ইঙ্গোলস্টাডের মেডিক্যাল হিস্টোরির মিউজিয়ামে। সম্প্রতি এটি প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। একদম প্রথম দিকের ডিজাইন করা এই প্লেগ মাস্ক দেখতে সবারই দারুণ আগ্রহ। আপাতত করোনার সংকট কেটে গেলে ভিড় বাড়ার আশায় সেখানকার কর্মীরা।