৩৯ জন স্ত্রী, ৯৪ সন্তান তাঁর; প্রয়াত বিশ্বের বৃহত্তম পরিবারের কর্তা

বিশালাকার চারতলা বাড়ি গম গম করছে সারাদিনই। ঠিক যেন রাজমহল। বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া মিজোরামের বাকতাওয়াং গ্রামের এই বাড়ি বিগত এক দশক ধরে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। আর হবে নাই বা কেন? এই বাড়িতেই যে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম পরিবার। যার সদস্য সংখ্যা শতাধিক। এবার চলে গেলেন এই পরিবারেরই কেন্দ্রচরিত্র তথা প্রধান কর্তা জিওনা চানা।

বার্ধক্যের কারণে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন জিওনা। তবে সম্প্রতি হঠাৎই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তাঁর। তিন দিন বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল জিওনার। শারীরিক অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠলে তাঁকে নিয়ে আসা হয় আইজলের একটি হাসপাতালে। ততক্ষণ চিকিৎসকদের হাতের বাইরে চলে গেছে পরিস্থিতি। হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান তিনি। 

১৯৪৫ সালে ২১ জুলাই ‘চানা’ সম্প্রদায়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম জিওনার। মিজোরামের এই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায় তৈরি হয় জিওনার জন্মের মাত্র ৩ বছর আগে। ১৯৪২ সালে। আর এই সম্প্রদায়ের পথিকৃৎ ছিলেন তাঁর বাবা। যে সময়ের কথা হচ্ছে, তখন গ্রামীণ অঞ্চল তো বটেই সারাভারত জুড়েই প্রচলিত ছিল বাল্যবিবাহ। অন্যথা হয়নি জিওয়ার ক্ষেত্রেও। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই প্রথম বিবাহ হয় তাঁর। 

তবে সন্তুষ্ট হলেন না তিনি। বছর খানেক পর থেকেই শুরু হল একের পর এক বিবাহ। সব মিলিয়ে যে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৩৯-এ। এমনকি এক বছরে দশটি বিবাহ করেও রেকর্ড করেছেন জিওনা। সন্তানের সংখ্যা ৯৪। রয়েছে ৩৩ জন নাতি-নাতনি। সেইসঙ্গে ১৮ জন পুত্রবধূ মিলিয়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৮১।

আরও পড়ুন
সেনাবাহিনীর আক্রমণে বাস্তুচ্যুত ১ লাখ, গণমৃত্যুর প্রহর গুনছে মায়ানমার

বিশাল বৃক্ষের শাখা-প্রশাখার মতো ছড়িয়ে থাকা গোটা পরিবারটাই থাকত একটা বাড়িতেই। বিশাল সেই বাড়িতে রয়েছে একশো ঘর। তার মধ্যে একতলার একটি ঘরে থাকতেন জিওনার। আর তার পার্শ্ববর্তী ঘরগুলি ছিল তাঁর পত্নীদের। ক্রম অনুযায়ী নির্বাচিত হত তাঁদের কক্ষ। অর্থাৎ, যে পত্নীর সঙ্গে তাঁর সদ্য-বিবাহ হয়েছে, তিনি থাকতেন সবথেকে কাছের ঘরে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, এত বড়ো একটা পরিবার যে শুধু একটা বাড়িতেই থাকত— তা নয়। বরং, গোটা পরিবারের রান্নাও হত একই সঙ্গে। আক্ষরিত অর্থেই যাকে বলে একান্নবর্তী পরিবার। এত বড়ো একটি পরিবার সম্পূর্ণ নির্ভরশীল কৃষিকাজ এবং পশুপালনে। জিওনা নিজেও চাষাবাদ করতেন। পাশাপাশি ‘চানা’ সম্প্রদায়ের প্রধান কর্তাও তিনি। কেবলমাত্র নিজের সন্তানসন্ততি এবং নাতি-নাতনিদের জন্য একটি পৃথক স্কুলও খুলে ফেলেছিলেন বিশ্বের বৃহত্তম পরিবারের প্রধান কর্তা। যা অনুদান পায় মিজোরাম সরকারের থেকেও। 

আরও পড়ুন
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশেই জমির আকাল!

২০১১ সালে জিওনার এই কীর্তি প্রকাশিত হয় ‘রিপ্লেজ বিলিভ ইট অর নট’ পত্রিকায়। তারপর গোটা বিশ্বেই প্রায় সাড়া পড়ে গেছিল তাঁকে নিয়ে। যদিও দুটি বিশ্ব রেকর্ড তাঁর হস্তগত ততদিনে। তবে ২০১১ সালের পর তাঁর পরিচিতি পৌঁছে যায় আন্তর্জাতিক স্তরে। লেগে থাকত বিদেশি পর্যটকদের ভিড়। 

আরও পড়ুন
এক সপ্তাহ ধরে দাবানলের গ্রাসে মিজোরামের অরণ্য

জিওনার মৃত্যুতে এখন থমথম করছে মিজোরামের সেই ‘রাজপ্রাসাদ’। শোকস্তব্ধ গোটা চানা সম্প্রদায়ই। পরিবার তথা সমাজের মূল মহীরুহই যে আর নেই। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীও…

Powered by Froala Editor