ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোম, পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে পুরুষরা?

পুরুষ না নারী— সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে কার গুরুত্ব বেশি, তা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক রয়েছে। তবে জীববিজ্ঞানের প্রেক্ষিতে, যুক্তি দিয়ে বিচার করলে এ-কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই পুরুষ বা নারী কোনো একটি লিঙ্গ পৃথিবী থেকে মুছে গেলে থমকে যাবে বংশবিস্তারের শৃঙ্খল। তবে এমনটাই হতে চলেছে আগামীতে। পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ ‘মুছে’ যেতে পারে পুরুষরা (Men)। বরং, জীবিত থাকবে কেবলমাত্র নারী। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই বংশবিস্তারে রেশ পড়ায় মানুষও একধাপ এগিয়ে যাবে অবলুপ্তির দিকে। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন গবেষকরা। 

কিন্তু হঠাৎ কেন পুরুষদের অস্তিত্ব মুছে যাবে বলে মনে হচ্ছে গবেষকদের? প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র বলছে, ক্রমশ কমছে পুরুষ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা। আসলে মানুষ-সহ যেকোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রেই মূলত দু’ধরনের সেক্স ক্রোমোজোম (Sex Chromosome) দেখা যায়— এক্স এবং ওয়াই। প্রথমটি পাওয়া যায় পুরুষ ও নারী উভয়ের শরীরেই। তবে দ্বিতীয়টি কেবলমাত্র উপলব্ধ পুরুষদেহে। এই ক্রোমোজোমটিই নির্ধারণ করে অপত্য সন্তান পুরুষ হবে না মহিলা। 

সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে আসছে ওয়াই ক্রোমোজোমটিই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের থেকে। আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে, নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে এই ক্রোমোজোম। আসলে জন্মলগ্নে, আজ থেকে ১৬ কোটি বছর আগে, ওয়াই ক্রোমোজোম নির্মিত হত প্রায় ৯০০টি জিন দিয়ে। আজকে সেই সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৫টিতে। বাকিগুলি অবলুপ্ত হয়েছে কালের অবহে। সেই অনুযায়ী হিসেব করলে, প্রতি ১০ লক্ষ বছরে ৫টি করে জিন হারিয়েছে পুরুষ ক্রোমোজোম। এভাবে চলতে থাকলে আর ১ কোটি বছরের মধ্যেই শূন্যে এসে পৌঁছাবে এই জিনের সংখ্যা। সম্পূর্ণভাবে অবলুপ্ত হবে পুরুষ প্রজাতি! 

প্রশ্ন থেকে যায়, তবে কি মানুষের আয়ু আর মাত্র ১ কোটি বছর? না, তেমনটা নয়। এক্ষেত্রে সামান্য আশার আলোও দেখছেন গবেষকরা। ইতিমধ্যেই জাপান এবং ইউরোপে দুটি ইঁদুরের প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। স্পাইনি ও মোল ভোলস-খ্যাত দুটি প্রজাতির ক্ষেত্রেই অবলুপ্ত হয়েছে ওয়াই ক্রোমোজোম। অথচ, তা সত্ত্বেও দিব্যিই পৃথিবীতে টিকে রয়েছে তারা। চালিয়ে যাচ্ছে বংশবিস্তারের প্রক্রিয়াও। আর এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে নতুন একধরনের ক্রোমোজোম। যা বিবর্তিত হয়েছে ওয়াইক্রোমোজোম থেকেই। তবে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হুবহু এক্স ক্রোমোজোমের মতোই। 

‘পুরুষ অবলুপ্তি’-র পরেও যদি মানুষকে বেঁচে থাকতে হয় এই পৃথিবীতে, তবে এমনই কোনো মিউটেশনের প্রয়োজন রয়েছে। বদলে যেতে থাকা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে মানুষও তেমনই কোনো বিবর্তনের পথে হাঁটবে, সেই সম্ভাবনা প্রবল। তবে পৃথিবীর বদলে যেতে থাকা জলবায়ু এবং বিশ্বউষ্ণায়ন মানুষের অস্তিত্বকে আরও বড়ো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করবে আগামী একশো বছরের মধ্যেই…

Powered by Froala Editor