প্রয়াত জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য, পাঠকমহলে শোকের ছায়া

পেশায় সাংবাদিক, নেশায় সাহিত্যিক— বাংলা সাহিত্যের জগতে এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। সেই তালিকারই একজন হয়ে উঠেছিলেন নিমাই ভট্টাচার্য। জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিক তো ছিলেনই, প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে নানা জায়গায় গিয়েওছেন। অন্যদিকে বাংলার পাঠক মহল তাঁর কলমে পেয়েছিল ‘মেমসাহেব’কে। এমনই ‘সব্যসাচী’দের প্রতিনিধি ছিলেন নিমাই ভট্টাচার্য। ৮৯ বছর বয়সে এসে থামল জীবনের চাকা। বার্ধক্যজনিত কারণেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।

১৯৩১ সালে অবিভক্ত বাংলার মাগুরাতে জন্ম নিলেও তাঁর কর্মস্থল ও পড়াশোনার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল কলকাতা। বি.এ. পাশ করার পরই তিনি জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকতার সঙ্গে। আঁকড়ে ধরেন এই পেশার মূল্যবোধ, অনুসন্ধান, সততা আর সাহসী মানসিকতার সঙ্গে। ‘লোকসেবক’ পত্রিকা দিয়ে শুরু হয়েছিল কর্মজীবন। পরে কলকাতার গণ্ডি পেরিয়ে সেই যাত্রা পৌঁছে যায় দিল্লিতে। বেড়ে চলে রিপোর্ট লেখা। কখনও পার্লামেন্ট, কখনও দেশ-বিদেশের নানা জায়গা— এই পুরো যাত্রাই তাঁর লেখায় ধীরে ধীরে ফুটে উঠেছে। একসময় যে কলম কেবল রিপোর্ট লিখত, পরে সেটিই চলে গেল উপন্যাসের পাতায়। ১৯৬৩ সালে অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় একটি উপন্যাস। সেটাই শুরু। আর সেই শুরুর দিন থেকেই নজর কাড়েন নিমাইবাবু। পাঠকমহলে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর লেখা। 

এরপর আর থামতে হয়নি। আসলে থামতে যে জানেন না নিমাই ভট্টাচার্য! একের পর এক লেখাও প্রকাশিত হতে লাগল, সেইসঙ্গে সাংবাদিক জীবনেও শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে লাগল। জওহরলাল নেহরু, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, মোরারজি দেশাই, ইন্দিরা গান্ধী-সহ অনেকেরই সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বিদেশেও সফর করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, পার্লামেন্ট করেসপনডেন্ট হিসেবে তাঁর নাম বাড়তে থাকে। কিন্তু কখনও নিজের মূল্যবোধ, নৈতিকতাকে বিসর্জন দেননি। বারবার বলেছেন সাংবাদিক হতে গেলে বিকিয়ে গেলে চলবে না। সেই সাহস, সেই দৃঢ়তা বজায় রাখতেই হবে। 

সেই ছাপই ফুটে উঠেছে ‘মেমসাহেব’ উপন্যাসে। ‘রিপোর্টার বাচ্চু’র কথা এখনও মনে করেন পাঠকরা। শুধু পাতার মধ্যেই আবদ্ধ থাকেনি এই গল্প; ১৯৭২ সালে এই উপন্যাস অবলম্বনে একটি সিনেমাও তৈরি হয়। অভিনয় করেন উত্তমকুমার ও অপর্ণা সেন। সাংবাদিক জীবনের নানা গল্প এখানে উঠে এসেছে। তাহলে কি এটা নিমাইবাবুর আত্মজীবনী? তাঁর স্পষ্ট জবাব, “আই উইল নাইদার কনফার্ম, নর ডিনাই।” নিজের রিপোর্ট হোক বা লেখা, সব জায়গাতে এমনই স্পষ্টভাবে কলম ধরেছেন তিনি। একসময় সাংবাদিকতা ছেড়ে মন দিয়েছেন লেখায়। ১৫০টিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। আজ সেইসব পিছনে রেখে অন্য জগতে পাড়ি দিলেন নিমাই ভট্টাচার্য।

Powered by Froala Editor