বিশ্বের বৃহত্তম আবর্জনা-দ্বীপ ঘিরে নতুন বাস্তুতন্ত্র!

মাইলের পর মাইল সমুদ্রজুড়ে ভাসছে মাছ ধরার জাল, প্লাস্টিকের বোতল, টায়ার, টুথব্রাশ-সহ অসংখ্য পরিত্যক্ত আবর্জনা। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম আবর্জনা দ্বীপ ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’-কে নিয়েই। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই অঞ্চলটি ভয়াবহ দূষণের জন্য দায়ী, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। কিন্তু এই দূষক আবর্জনার স্তূপই (Garbage Patch) বর্তমানে পরিণত হয়েছে আস্ত বাস্তুতন্ত্রে (Ecosystem)। সম্প্রতি একাধিক গবেষণাতে উঠে আসছে এমনই তথ্য। 

বছর তিনেক আগের কথা। ২০১৯ সাল। প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলছে প্রায় গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৩০০ নটিক্যাল মাইল সাঁতার কাটেন ফরাসি সাঁতারু বেনোট লেকোমতে। সর্বপ্রথম তাঁরই নজর কেড়েছিল একটি অভিনব বিষয়। না, এই পথের যাত্রী তিনি একা নন। তাঁকে যেন সর্বদাই ঘিরে রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব। এই দূষণ-সম্পৃক্ত অঞ্চলেই ঘুরে বেড়াচ্ছে অজস্র জেলিফিস, কচ্ছপ, মাছ আবার কখনও কখনও ছোটো সামুদ্রিক প্রাণীর দল। 

লেকোমতে এই তথ্য প্রকাশ্যে আনার পরই গবেষণায় নেমেছিলেন একদল বিজ্ঞানী। এই বিশেষ অঞ্চলটির জলের নমুনা পরীক্ষা এবং বসবাসকারী সামুদ্রিক প্রাণীদের চিহ্নিত করাই ছিল তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। তবে প্রাথমিক সমীক্ষা চালিয়েই বেশ অবাক হয়েছিলেন তাঁরা। ব্লু ড্রাগন থেকে শুরু করে নুডিব্রাঞ্চ, অর্তুগিজ ম্যান-ও-ওয়ারস, নিউস্টন-সহ একাধিক বিরল সামুদ্রিক প্রাণীদের সন্ধান পান তাঁরা। বিশেষত যে-সকল প্রাণীদের সাধারণত গভীর সমুদ্রে ছাড়া দেখা মেলে না কোথাও, তারাই দিব্যি বাসা তৈরি করেছে এই আবর্জনা স্তূপের মধ্যে। এবং তাদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। 

সাধারণত সমুদ্রস্রোতের প্রকারভেদ এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের ওপর ভিত্তি করে, পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয় সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে। প্রতিটি বহিন্ন ভিন্ন বাস্ততন্ত্রেই দেখা মেলে পৃথক পৃথক প্রাণীর। গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচের বাস্ততন্ত্রে এই পাঁচটি গোত্রেরই প্রাণীদের দেখা মেলে। অর্থাৎ তা আক্ষরিক অর্থেই ফাইভ গিয়ার ইকোসিস্টেমে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন
বহু বিতর্ক পেরিয়ে অবশেষে আবর্জনামুক্ত হতে চলেছে দেওনার?

পরিসংখ্যান-সহ সংশ্লিষ্ট গবেষণাটি গত মাসে বায়োঅরক্সিভ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। যদিও বিশ্বজুড়ে এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে সেভাবে আলোচনা হয়নি বলেই অভিমত গবেষকদের। প্রশান্ত মহাসাগরের এই আবর্জনা দ্বীপে বিপুল পরিমাণ বিরল প্রাণীদের অস্তিত্ব নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত তাঁরা। না, শুধু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠার জন্যই নয়। আসলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে প্লাস্টিক অপসারণের জন্য মাঝেমধ্যেই অভিযানে নামেন পরিবেশকর্মী এবং সংরক্ষণবিদরা। তাঁদের এই প্রচেষ্টা হিতে বিপরীত হয়ে উঠতে পারে এই ‘সদ্যনির্মিত’ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে। 

আরও পড়ুন
২২ বছর ধরে সমুদ্রের আবর্জনা পরিষ্কার করে চলেছেন বালির বৃদ্ধ

ওসান ক্লিনআপ ফাউন্ডেশনের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলে সবমিলিয়ে ৭৯ টন প্লাস্টিক রয়েছে। সেইসঙ্গে অন্যান্য দূষকের উপস্থিতি সাবানের মতো শ্লেষ্মার চাদর তৈরি করে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এই ভেলার উপস্থিতিই আসলে প্রাণের অস্তিত্বের কারণ হয়ে উঠেছে। শুধু বসবাসই নয়, ভাসমান এই ভেলায় রীতিমতো বংশবিস্তার করে চলেছে বহু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী। প্লাস্টিক অপসারণের প্রক্রিয়া যাদের অস্তিত্বকে ঠেলে দিতে পারে অবলুপ্তির দিকে। তবে উপায়? না, এখনও পর্যন্ত এই বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রেখে দূষণরোধের কোনো নির্দিষ্ট উপায়ের সন্ধান দিতে পারেননি গবেষকরা। তার জন্য প্রয়োজন আরও বিস্তারিত গবেষণার। কিন্তু বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধানরা কি আদৌ নজর দেবেন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে? থেকে যাচ্ছে সেই প্রশ্নই…

আরও পড়ুন
লকডাউনে গঙ্গায় দূষকের ঘনত্বে ৫০ শতাংশ হ্রাস : কানপুর আইআইটি

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More