প্রয়াত জীবনসঙ্গীর কণ্ঠস্বর শুনতে প্রতিদিন মেট্রোস্টেশনে হাজির হন বৃদ্ধা

মেট্রোরেল ঢুকছে প্ল্যাটফর্মে। স্পিকারে বাজছে সতর্কবার্তা। ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ, প্লিজ।’ ব্যস্ত যাত্রীদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে স্টেশনে। তবে এসবের মধ্যেই ঠায় একভাবে স্পিকারের দিকে চেয়ে বসে আছেন এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা। ছল ছল করছে তাঁর চোখ। না, কোনো উপন্যাস কিংবা চলচ্চিত্রের দৃশ্য নয়। এই ছবি বাস্তবের। প্রতিদিনই এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকে ব্রিটেনের ভিক্টোরিয়া এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশন। 

মার্গারেট ম্যাককালাম। ইংল্যান্ডের সত্তরোর্ধ্ব এই ভদ্রমহিলার দৈনন্দিন জীবনের গল্প রীতিমতো হার মানাবে যে-কোনো হলিউডি লাভস্টোরিকে। হ্যাঁ, প্রয়াত জীবনসঙ্গীর স্মৃতি আঁকড়ে থাকতেই তিনি প্রতিদিন হাজির হন ভিক্টোরিয়া এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশন। কিন্তু কীভাবে তাঁর গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে গেল এই মেট্রোস্টেশন? কেনই বা প্রয়াত জীবনসঙ্গীর স্মৃতিচারণায় তিনি হাজির হন সেখানে? সেই গল্পেই ফেরা যাক বরং।

২০০৭ সালের কথা। সে-বছর প্রয়াত হয়েছিলেন তাঁর স্বামী তথা অভিনেতা অসওয়াল্ড লরেন্স। শুধু থিয়েটার-জগতেই নয় কণ্ঠশিল্পের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছিলেন অসওয়াল্ড। বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যখন নতুন করে সেজে উঠছিল ব্রিটেন। তখন টিউব রেলের ঘোষণার জন্য ডাক পড়েছিল লরেন্সেরই। ১৯৫০ সালে তিনিই কণ্ঠ দিয়েছিলেন রেলওয়ে স্টেশনের সতর্কবার্তাগুলিতে। আজও ব্রিটেনজুড়ে সমস্ত টিউব স্টেশনেই বাজানো হয় তাঁর রেকর্ড করা সেই বার্তাগুলি।

বলতে গেলে এই রেকর্ডগুলির মধ্যে দিয়েই যেন বেঁচে আছেন অসওয়াল্ড। বলতে গেলে এইটুকুই সম্বল মার্গারেটের। অসওয়াল্ডের কিছু চিঠিপত্র, ছবি তাঁর কাছে আছে ঠিকই, কিন্তু প্রিয়জনের কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়ার অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটা সময় ইংল্যাল্ড, স্কটল্যান্ড-জুড়ে নাটকের মঞ্চে রাজত্ব করলেও, সেসব অভিনয়ের বেশিরভাগটাই সংরক্ষণ করেনি তাঁর থিয়েটার দল। শুধু রয়ে গেছে টিউব রেলের ঘোষণাটুকুই। তাঁর মৃত্যুর ১৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আজও সেটাই আঁকড়ে রয়েছেন মার্গারেট।

তবে তার জন্যও বেশ লড়াই করতে হয়েছে মার্গারেটকে। ২০১৯-এর শেষের দিকে অসওয়াল্ডের এই রেকর্ডকে বদলে ফেলেছিল ব্রিটেনের টিউব রেল সংস্থা। তাঁর জায়গা দখল করেছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কণ্ঠস্বর। খানিক অভিমান নিয়েই রেলের দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মার্গারেট। সে-সময়ই প্রকাশ্যে আসে তাঁর দৈনন্দিন জীবনের এই অদ্ভুত গল্প। এই প্রেমকাহিনি। তবে তাঁকে হতাশ করেনি রেল দপ্তর। মার্গারেটের আবেদন বিবেচনা করে আবার ফিরিয়ে আনা হয় অসওয়াল্ডের রেকর্ড। বর্তমানে অন্যান্য স্টেশনে যান্ত্রিক গলা বাজলেও কেবলমাত্র ভিক্টোরিয়া এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে বাজানো হয় অসওয়াল্ডের রেকর্ড। আর সেই কারণেই মার্গারেটের প্রতিদিনের গন্তব্য এই রেলওয়ে স্টেশন। তাঁর এই প্রেমকাহিনি অনায়াসেই জায়গা করে নিতে পারে যে-কোনো উপন্যাসের পাতায় কিংবা সেলুলয়েড স্ক্রিনে...

Powered by Froala Editor