পাঁচিল গড়ে পৃথক উচ্চ ও নিম্নবর্ণ, প্রশাসনিক পদক্ষেপেও কি বদলাবে দেশ?

বৃষ্টির জমা জলের ধাক্কায় বেশ কিছুদিন ধরেই নড়বড় করছিল ইটের পাঁচিল। এই পাঁচিলের নিচেই বাস বেশ কয়েকঘর মানুষের। পাঁচিল ভেঙে পড়ার ভয় পেয়েছিলেন তাঁরা। বারবার পাশের বাড়ির মালিককে অনুরোধ করেছিলেন, দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়ার আগেই সেটাকে নষ্ট করে দেওয়া হোক। প্রশাসনের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউই সেই আবেদনে সাড়া দেননি। শেষ পর্যন্ত সত্যিই জলের ধাক্কায় ভেঙে পড়ল পাঁচিল। আর ইটচাপা পড়ে মারা গেলেন ১৭ জন মানুষ। ২০১৯ সালেই তামিলনাড়ুর বুকে ঘটেছিল এই ঘটনা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে, কী এমন গুরুত্ব এই পাঁচিলের? মানুষের জীবনের চেয়েও তার দাম বেশি? আসলে এই পাঁচিল তৈরি হয়েছিল তথাকথিত নিচু জাতের মানুষের ছায়া বাঁচিয়ে চলার জন্য। যাতে তাঁরা সীমানা পেরিয়ে উচ্চবর্ণের মানুষের এলাকায় ঢুকে পড়তে না পারেন। আর জাতপাতের নিয়মের কাছে মানুষের জীবন কবেই বা মূল্য পেয়েছে?

তবে এবছর প্রশাসনের ভূমিকা যেন বেশ ব্যতিক্রমী। কয়েকদিন আগেই কোয়েম্বাটোর শহরে নগর কর্তৃপক্ষ দাঁড়িয়ে থেকে ভেঙে ফেলেছে একটি পাঁচিল। যে পাঁচিল ‘কাস্ট ওয়াল’ বা ‘জাতিপ্রাচীর’ নামেই বেশি পরিচিত। দক্ষিণ ভারতে এই রীতি নতুন নয়। এর আগেও একাধিকবার বিতর্কের মুখে পড়েছে এই জাতিপ্রাচীর। ঠিক কবে থেকে এই রীতি শুরু হয়, তার কোনো হিসাব নেই। তবে স্বাধীনতার সময় থেকেই নানা শহরে এমন পাঁচিল গজিয়ে ওঠে। আর চোখের সামনে সব দেখেও নিশ্চুপ হয়ে থাকে প্রশাসন। এক এক সময় তো এর বাড়বাড়ন্ত সীমা ছাড়িয়ে যায়। কখনও দেখা যায় একটা গোটা বস্তির মানুষদের ঘিরে ফেলা হয়েছে পাঁচিল দিয়ে। তাঁদের সবচেয়ে কাছের রাস্তায় পা রাখতে গেলেও গোটা এলাকা ঘুরে কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে এই ধরণের পাঁচিল দেখা যায় সবচেয়ে বেশি।

২০০৭ সালে তামিলনাড়ুর উথাপুরম এলাকার একটি জাতিপ্রাচীরকে ঘিরে আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠেছিল সারা দেশ। মারিয়াম্মা মন্দির থেকে দলিত সম্প্রদায়কে দূরে রাখার জন্য এই পাঁচিল তৈরি করা হয়েছিল কয়েক দশক আগেই। কিন্তু তারপরেও নাকি কেউ কেউ পাঁচিল বেয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতেন। সেই রাস্তা আটকাতে পাঁচিলে বিদ্যুৎসংযোগ করে মন্দির কর্তৃপক্ষ। তবে জাতীয় স্তরের চাপ থাকায় ২০০৮ সালে সেই পাঁচিল ভেঙে ফেলা হয়। মারিয়াম্মা মন্দিরেও সকলের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু বিচ্ছিন্ন কিছু বিষয় বাদ দিলে মোটের উপর প্রশাসন কিছুই করে না। কোয়েম্বাটোর শহর প্রশাসনের এই উদ্যোগ কি এতদিনের অচলায়তন ভাঙতে শুরু করল? অবশেষে এই জাতিহিংসার শেষের শুরু হল বলেই মনে করছেন অনেকে।

Powered by Froala Editor