খ্রিষ্টাব্দ-বঙ্গাব্দ-শকাব্দের পাশাপাশি, খ্যাতি ও প্রচারে পিছিয়ে নেই ‘গৌরাব্দ’ও

আবারও চলে এল একটা নতুন বছর। পয়লা জানুয়ারিকে স্বাগত জানাতে সমস্ত মানুষ মেতে ওঠেন আনন্দে। তবে শুধু এই একটা দিনই নয়। আমাদের বাংলার সমাজ ও ইতিহাসের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে তিনটে অব্দ। প্রথম দুটি অপেক্ষাকৃত পরিচিত— বঙ্গাব্দ ও শকাব্দ। ইতিহাসের পাতায় বা ক্যালেন্ডার, পঞ্জিকায় এদের সঙ্গে পরিচিত আমরা। কিন্তু বঙ্গদেশে আরও একটা অব্দ রয়েছে, যার কথা আমরা তুলনামূলক কম শুনতে পাই। গৌরাব্দ।

গৌরাব্দ শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে আরও দুটি শব্দ। গৌর, এবং অব্দ। এই অব্দের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে বিরাজ করছেন গৌর, অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যদেব। ১৪৮৬ খ্রিষ্টাব্দে, চৈতন্যদেবের জন্মের দিনটি থেকে গৌরাব্দের গণনা শুরু হয়। বলা হয়, জন্মের দিনটি ছিল দোল পূর্ণিমা। তার পরের দিন, অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে চান্দ্রমাস অনুযায়ী বৈষ্ণব পঞ্জিকা তৈরি হয়। আর তখনই আসে গৌরাব্দ। যেমন, ২০১৯-২০ বর্ষের গৌরাব্দ হবে ৫৩৩।

বৈচিত্র্য এখানেই শেষ নয়। গৌরাব্দেও বারোটা মাস, কিন্তু প্রতিটা মাস বিষ্ণুর ১২টা নাম নিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন— বিষ্ণু, মধুসূদন, ত্রিবিক্রম, বামন, শ্রীধর, হৃষীকেশ, পদ্মনাভ, দামোদর, কেশব, নারায়ণ, মাধব, গোবিন্দ। এছাড়াও রয়েছে একটি অধিমাস, যার নাম পুরুষোত্তম। এছাড়াও এই অব্দের বিশেষত্ব হল, এখানে সূর্য ও চান্দ্র দুটি বর্ষেরই মিলিত গণনা করা হয়।

আপাত দৃষ্টিতে বঙ্গাব্দের পঞ্জিকার সঙ্গে কিছু মিল থাকলেও এই অব্দ ও পঞ্জিকায় চৈতন্যদেবই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে বাংলার আরেক ক্যালেন্ডার, আরেক অব্দ। বঙ্গাব্দ, শকাব্দের মতো অধিক পরিচিত না হলেও, বাংলার ঐতিহ্য ও সমাজের একটা অংশ।