রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির নিলাম লন্ডনে

সাহিত্যিক হিসাবে যখন বিশ্বজয় করে ফেলেছেন রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore), ঠিক সেইসময় জীবনসায়াহ্নে এসে বেছে নিয়েছিলেন এক বিকল্প মাধ্যমকে। এতদিন পাণ্ডুলিপির পাতায় কাটাকুটির মধ্যে আটকে ছিল যেসব ছবি, তাকেই রং-তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে শুরু করলেন। আর মাত্র ১ দশকের শিল্পীজীবনেই এই মাধ্যমেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর ৮০ বছর পর লন্ডনের ক্রিস্টিজ সংস্থার উদ্যোগে নিলামে উঠতে চলেছে তাঁর একটি নামহীন ছবি। পূর্ণদৈর্ঘ্যের একটি ক্যানভাসে আঁকা এক নারী ও এক পুরুষের ছবি, ক্রিস্টিজ যার নাম রেখেছে ‘যুগল’।

রবি ঠাকুর বলতেন, তাঁর লিখিত সাহিত্য থাকবে প্রাচ্যের জন্য। আর তাঁর ছবি পাশ্চাত্যের জন্য। তবে পশ্চিমের দেশে এখনও অবধি তাঁর ছবির প্রদর্শনী বা নিলাম খুবই কম হয়েছে। তার কারণ স্বাধীন ভারতে ৯ জন শিল্পীর ছবিকে জাতীয় সম্পদ বলে ঘোষণা করা হয়। যার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ একজন। কাজেই সেই ছবি ভারতের বাইরে বাণিজ্যিক কারণে প্রদর্শিত করা যাবে না। একমাত্র যা শিল্পীর জীবদ্দশাতেই বিক্রি হয়েছে, সেগুলো নিলামে উঠতে পারে। তবে সেই সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। ৩০-এর দশকে বিশ্বভ্রমণের সময় যাতায়াতের খরচ যোগারের জন্যই বেশ কিছু ছবি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্যারিসের পিগল আর্ট গ্যালারি সহ  ইংল্যান্ড, জার্মানি ও রাশিয়ার বেশ কিছু জায়গায় প্রদর্শিত হয়েছিল সেইসব ছবি। তবে পিগলে বিক্রি হওয়া ছবির সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি।

পিগল আর্ট গ্যালারি থেকেই এই পূর্ণদৈর্ঘ্যের ক্যানভাসটি কিনেছিলেন এডিথ আন্দ্রে নামে এক জার্মান মহিলা। তারপর সেই ছবি আসে এডিথের দাদা ওয়াল্টার রাথেনিউয়ের সংগ্রহে। এই রাথেনিউ পরিবারের কাছ থেকেই ছবিটি ক্রিস্টিজের হাতে আসে। চলতি মাসেই লন্ডনে শুরু হবে এশিয়ার আধুনিক শিল্পকলার প্রদর্শনী। আর সেখানেই রবি ঠাকুরের এই ছবিটিকেও রাখা হবে বলে জানিয়েছে ক্রিস্টিজ। যদিও আজও ইউরোপের শিল্পীদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি নিয়ে মিশ্র মতামত দেখা যায়। অনেক সমালোচক তাঁকে মধ্যমানের শিল্পী হিসাবেই মনে করেন। আবার অনেকের মতে তৎকালীন পাশ্চাত্য শিল্পশৈলীর সঙ্গে ভারতীয় শিল্পশৈলীর মিশেলে যে নতুন শিল্পকলার জন্ম দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তার ধারক বা বাহক আর কেউ নেই। সবচেয়ে বড়ো কথা, ছবির ভিতর দিয়ে গভীর দর্শনের কথা বুঝিয়ে দিতেন রবীন্দ্রনাথ। তবে সমালোচকদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও ইউরোপের বহু মানুষের কাছে আজও তিনি ‘গুরুদেব’। আর তাঁর সমস্ত সৃষ্টিই ইউরোপের কাছে তুলনাহীন। তাই এতদিন পর লন্ডনের বুকে আবার তাঁর ছবি প্রদর্শিত হবে শুনে উচ্ছ্বসিত অনেকেই।

Powered by Froala Editor

More From Author See More