সমুদ্রতলে পোস্ট অফিস, ডুবসাঁতার দিয়ে পৌঁছতে হয় চিঠি!

ধরুন ছুটি কাটাতে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত প্রবালদ্বীপে। সেখানে জলের মধ্যে আলোর খেলা আর ডলফিনের মাতামাতি দেখতে দেখতে ইচ্ছে হতেই পারে প্রিয়জনকে একটা চিঠি লিখবেন। লিখে তো ফেললেন, কিন্তু তা পোস্ট করবেন কী করে? আশেপাশে কোনো পোস্ট অফিস তো নেই। একটু খোঁজাখুঁজি করতেই হয়তো কেউ আপনাকে সমুদ্রের দিকে নির্দেশ করবে। বলবে সমুদ্রের নিচে ডুব দিতে। আপনি তাহলে নিশ্চই বানুয়াতুর মেলে উপকূলে গিয়ে উঠেছেন। কারণ এখানে পোস্ট অফিস রয়েছে সমুদ্রের নিচেই। আর তা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো জলমগ্ন পোস্ট অফিস (Underwater Post office)।

অবশ্য সবচেয়ে পুরনো হলেও তার বয়স খুব বেশি নয়। মাত্র ২০০৩ সালে তৈরি হয় বানুয়াতুর এই পোস্ট অফিস। তার আগে দিব্যি মাটির উপরেই একটি পোস্ট অফিস ছিল। কিন্তু একুশ শতকের গোড়াতেই ইন্টারনেট আর মোবাইলের যুগে চিঠিপত্র লেখার অভ্যেস রীতিমতো উঠে যায়। আর মেলে উপকূলে তো স্থায়ী বাসিন্দা বেশি কেউ নেই। সবাই আসেন ছুটি কাটাতে। চিঠিপত্র তাঁরা বিশেষ লেখেন না। কেবল কয়েকজন রোমান্টিক মনের মানুষ চিঠি লেখেন। তাই পোস্ট অফিসের কাজের চাপও ছিল রীতিমতো কম। এইসব নিয়েই একদিন বানুয়াতুর পোস্টমাস্টার আর এক রিসর্ট মালিকের মধ্যে কথা হচ্ছিল। স্থানীয় একটি পাবে মদ্যপান করতে করতে চলছিল আলোচনা। তখনই কিছুটা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দুজনেরই মনে হয়, চিঠি লেখার সঙ্গে যদি কিছুটা অ্যাডভেঞ্চার যোগ করা যায় তাহলে মন্দ হয় না।

সেই পরিকল্পনা থেকেই গড়ে ওঠে বানুয়াতু পোস্ট অফিস। এখান থেকে চিঠি পাঠাতে হলে আপনাকে মাস্ক-ফিন পরে নেমে পড়তে হবে সমুদ্রের জলে। রীতিমতো স্কুবা ডাইভিং শিখে তবেই পৌঁছতে পারবেন সেখানে। অবশ্য আপনি যদি স্কুবা ডাইভিং না জানেন তাহলে চিঠি নিয়ে যাওয়ার জন্য আছে কিছু এজেন্টও রয়েছেন। ভাবছেন কাগজে লেখা চিঠি জলের নিচে নষ্ট হয়ে যাবে? সেই সমস্যারও সমাধান আছে। সমুদ্রের ধারেই পাওয়া যায় ওয়াটারপ্রুফ খাম। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এই পোস্ট অফিস তৈরির পর কিন্তু পোস্টমাস্টারের উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। এরপর বানুয়াতু পোস্ট অফিসে চিঠির পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই। এমনকি এর পরে জাপান, মালয়েশিয়া সহ পৃথিবীর আরও ৫টি জায়গায় জলমগ্ন পোস্ট অফিস তৈরি করা হয়েছে। এমন একটা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে তো মানুষ চাইবেই।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বয়স দুশোরও বেশি, পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান ডাকঘর রয়েছে ভারতেই