প্রাণীহত্যায় ইতি, শিকার উৎসবের প্রাক্কালে অস্ত্র জমা দিলেন উত্তরবঙ্গের আদিবাসীরা

বসন্ত উৎসব মানেই প্রকৃতির নানা রঙে সেজে ওঠার উৎসব। যতই রুক্ষ থাকুক চারপাশ, এই সময় যেন নতুন ভাবে সেজে ওঠে সবটা। সেজে উঠি আমরাও। দোলের রঙে রাঙিয়ে দিই একে অপরকে। কিন্তু দোল এলেই একরকম আতঙ্কে ভোগে পুরুলিয়া বা উত্তরবঙ্গের বন দপ্তর। শিকার আতঙ্ক!

আরও পড়ুন
আদিবাসী মহিলাদের নিয়ে তৈরি বিশেষ ব্যাটেলিয়ান, ভারতে প্রথম

দোল এলেই আদিবাসী সমাজের চিরাচরিত ‘শিকার উৎসব’ শুরু হয়ে যায়। দলে দলে জঙ্গলে ঢুকে প্রাণীদের মারা হয়। এবারও তার আশঙ্কা ছিল। সবাইকে চমকে দিল উত্তরের জলদাপাড়া বনবিভাগের কোদালবস্তি সংলগ্ন বাসিন্দারা। প্রত্যেকে তাদের শিকার উৎসবের যাবতীয় ধারালো অস্ত্র স্বেচ্ছায় বন দফতরের অফিসে এসে জমা দিয়ে যান। যা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ও সদর্থক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সবাই।

আরও পড়ুন
লাগিয়েছেন ১ লক্ষেরও বেশি গাছ, পদ্মশ্রী আদিবাসী বৃদ্ধার

আদিবাসীদের প্রাচীন ধর্মীয় রীতির একটি অংশ হল এই শিকার উৎসব। পুরুলিয়া, অযোধ্যা-সংলগ্ন অঞ্চলে যা পরিচিত ‘সারহুল’, ‘সেন্দরা’ নামে। তবে শুধু ওই অঞ্চলেই নয়, একই পরব দেখা যায় উত্তরবঙ্গেও। সেখানকার আদিবাসীদের মধ্যেও বহু বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। দোলের সময় তির-ধনুক, বল্লম, ছুরি নিয়ে তাঁরা চলে যান জঙ্গলে। হাতের সামনে যে প্রাণী পান, শিকার করে নিয়ে আসেন। বংশ পরম্পরায় এটা চলে আসছে। যেহেতু ধর্মীয় পরবের সঙ্গে এই উৎসব জড়িত, তাই সেটা ছাড়তেও রাজি নন আদিবাসীরা। বারবার অনুরোধ করা হয় বন দফতর ও পুলিশের তরফ থেকে। কঠোর বন্যপ্রাণ আইনও লাগু করা হয়। কিন্তু কিছুতেই পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। উত্তরবঙ্গে এই শিকার উৎসব সংখ্যায় কমলেও, সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। চোরা পথে ঠিকই এই উৎসব চালিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন আদিবাসীরা।

আরও পড়ুন
কবিতাই অস্ত্র তাঁর, বিশ্বের দরবারে আদিবাসী স্বর পৌঁছে দিচ্ছেন ঝাড়খণ্ডের তরুণ কবি

এই বছরও আশঙ্কা রয়েছে পুরো মাত্রায়। প্রতিটা ঘরে গিয়ে বোঝানো হয়েছে বিগত কয়েক বছর ধরে। বনের প্রাণীরা না থাকলে যে আমাদেরও অস্তিত্বের সংকট দেখা যাবে, সেটাই বোঝানোর চেষ্টা চলছে। পরিবেশের জন্য, সভ্যতার জন্য তো প্রথার বদল আসতেই পারে। সেটা তো কাম্য। এতদিন পর সেই প্রচারের একটা সদর্থক ফল পেলেন জলদাপাড়ার বন দফতর। কোদালবস্তির আদিবাসীরা নিজেরা এসে তাঁদের সমস্ত অস্ত্র রেখে গেছেন দপ্তরে। এর ফলে গোটা আদিবাসী সমাজেও একটা বার্তা যাবে বলে মনে করছেন বনকর্তারা। একে একে সবাই এই উদ্যোগে সামিল হবে, এটাই আশা রাখছেন তাঁরা।

More From Author See More