মৃত্যুর মুখ থেকেও ফিরে আসা যায়, বুঝিয়েছিলেন এই দশ ব্যক্তি

/১১

জীবন যে কতটা অনিশ্চিত তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় দুর্ঘটনা। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পাল্টে যেতে পারে মানুষের নিয়তি। তবে মৃত্যুর দোরগোড়া থেকেও ট্র্যাজেডিকে জয় করে ফিরে এসেছে মানুষ, এমন উদাহরণও পাওয়া রয়েছে। যা শুনলে শুধু আশ্চর্যই নয়, বরং কল্পকথাই মনে হবে। দেখা নেওয়া যাক এমনই ১০ জন ব্যক্তিতে যাঁরা মৃত্যুর আকস্মিকতাকে জয় করেছেন ‘অসম্ভব’ হলেও...

/১১

অ্যানা বেগেনহোম— পেশায় একজন অর্থোপেডিক সার্জেন এই মহিলা। সেটা ছিল ১৯৯৯ সালের ২৭ মার্চ। হাসপাতালের কাজ শেষ করে জোলেন মাউন্টেনে স্কি করতে গিয়েছিলেন অ্যানা। সেখানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বরফ জমা নদীতে পড়ে যান তিনি। দীর্ঘ ৮০ মিনিট বরফের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে আটকে ছিলেন অ্যানা। যখন উদ্ধার করা হয় তাঁকে, দেহের তাপমাত্রা ৫৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ইতিহাসে মানবদেহের সর্বনিম্ন রেকর্ডেড তাপমাত্রা এটিই। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হৃদস্পন্দনও। ক্লিনিক্যাল ডেথ ঘোষণা করার পরেও বেঁচে ওঠেন অ্যানা। বর্তমানে সেই হাসপাতালেই চিকিৎসার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

/১১

অ্যানথোনি বর্জেস— ফ্লোরিডার মার্জারি স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুল। ২০১৮ সালে সেখানেই ঘটে যায় এক নৃশংস ঘটনা। অটোমেটেড রাইফেল নিয়ে স্কুলে হানা দেয় বেশ কিছু দুষ্কৃতি। সব মিলিয়ে সেই হামলায় মারা যান ১৭ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক। আহত হয়েছিল আরও ১৭ জন। তবে ১৫ বছর বয়সী অ্যানথোনির জন্যই দুষ্কৃতিরা প্রবেশ করতে পারেনি তাঁর ক্লাসে। দরজা বন্ধ করে তিনি শরীর দিয়ে আটকে রেখেছিলেন পথ। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান নিজে। ৫টি গুলি ছিন্নভিন্ন করে দেয় লিভার, ফুসফুস, পা, তলপেট। হাসপাতালে ১৩টি অস্ত্রোপচারের পর সেরে ওঠেন তিনি। সেদিন তাঁর জন্য প্রাণ বেঁচেছিল ২০ জন সহপাঠীর।

/১১

রোমেন গ্রসজিন— সদ্য মাস দুয়েক আগের ঘটনা। গত বছর ২৯ নভেম্বরেই বাহারিন গ্র্যান্ড প্রিক্সেই ঘটেছিল এই দুর্ঘটনা। রেস চলাকালীন ড্যানিল ভিয়াটের গাড়ির সঙ্গে প্রথমে সংঘর্ষ হয় রোমেনের। তারপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁর গাড়ি লোহার ফেন্সিংয়ে ধাক্কা খায় প্রায় ২২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে। সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ। দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায় গাড়িতে। চমকে ওঠেন সকলেই। দ্রুত সাহায্যের জন্য দমকল, পুলিশ ছুটে আসার আগেই অগ্নিকাণ্ড থেকে নিজে হেঁটে বেরিয়ে আসেন এই ফর্মুলা ওয়ান রেসার।

/১১

ইয়াহিয়া আবদি— বছর পনেরোর আবদি শরণার্থী হিসাবে পালিয়ে এসেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। তবে তাঁর মা তখনও ইথিওপিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে। মাকে ফিরিয়ে আনতেই প্রহরীদের চোখে এড়িয়ে বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েন আবদি। তারপর বোয়িং ৭৫৭ বিমানে ল্যান্ডিং গিয়ারে লুকিয়েই পাড়ি দেন ৫ ঘণ্টার আকাশ পথ। ৩৮০০০ ফুট উচ্চতায় -৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রাতেও বেঁচে ছিলেন তিনি। তবে জ্ঞান ছিল না এই কিশোরের। পরে চিকিৎসকরা জানান, সাব-জিরো উষ্ণতা এবং অক্সিজেনের অভাবে সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশনে চলে গিয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া আর কোনো যুক্তিই খুঁজে পাওয়া যায় না এই মৃত্যু জয়ের ঘটনার...

/১১

জুলিয়ান কোয়েপকে— সম্পূর্ণ হয়েছিল স্নাতকতা। তারওপর আবার ক্রিসমাস ইভ। আনন্দের সঙ্গেই বাড়ি ফিরছিলেন এই তরুণী। তবে ১৯৭১ সালের সেই সন্ধেতেই ঘটে যায় এক ঐতিহাসিক বিপর্যয়। মাটি থেকে ২ মাইল উচ্চতায় বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয় জুলিয়ানের বিমান। আর কেউ প্রাণে না বাঁচলেও, জুলিয়ান বেঁচে যান সিটবেল্টের জন্য। শুধু ভেঙেছিল একটি কলার বোন। সেইসঙ্গে হাতে-পায়ে কিছু ক্ষত। ভেঙে পড়া বিমান থেকে তিনি মিষ্টির বাক্স পেয়েছিলেন কিছু। তা দিয়ে আর নদীর জল খেয়েই ১১ দিন জঙ্গলে বেঁচে থাকেন তিনি। তারপর স্থানীয় মৎস্যজীবীরা উদ্ধার করেন তাঁকে।

/১১

জিম ওয়িকওয়্যার— বিশ্বের অন্যতম কঠিন পর্বত অভিযানগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে কে-২ বা গডউইন অস্টিন। যেখানে প্রতি চার জন আরোহীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে একজনের। দ্বিতীয় চেষ্টায় এই পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছিলেন জিম। তবে ফেরার পথে ফুরিয়ে যায় অক্সিজেন। ছিল না স্টোভ কিংবা আলোও। হিমশীতল তাপমাত্রায় নাইলনের একটি পাতলা স্লিপিং ব্যাগের মধ্যেই রাত কাটান তিনি। পরের দিন পর্বত থেকে কোনো মতে নেমে হাসপাতালে আশ্রয় নেন জিম। দেখা যায় রক্ত জমাট বেঁধেছে ফুসফুসে, সেইসঙ্গে নিউমোনিয়া। একটি পা বাদ যায় জিমের। তবে ফুসফুসে অস্ত্রোপচারের পর প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

/১১

অ্যানাটোলি বার্গোস্কি— এই সোভিয়েত বিজ্ঞানীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছিল, তা শুনলেই চমকে উঠবেন যে কেউ। কণা ত্বরকে মাথা আটকে যায় ডঃ অ্যানাটোলির। আর তারপরেই দুর্ভাগ্যক্রমে চালু করে দেওয়া হয় যন্ত্র। আলোর তুল্য গতিতে ছুটে আসে প্রোটন কণার স্রোত। দ্রুততার সঙ্গে যন্ত্রের বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিন্ন করেন সহ-গবেষকরা। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। প্রায় ২-৩ লক্ষ রন্টগেনের তেজস্ক্রিয়তা ঝলসে দিয়েছে তাঁকে। মস্কোর একটি হাসপাতালে ভর্তি করার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। তবে দুই কানই হারায় শ্রবণশক্তি। প্যারালাইসিস হয়ে যায় মুখমণ্ডলে।

/১১

জোন মুরে— অভিযানের উত্তেজনা নিমেষে বদলে গিয়েছিল নিয়তিতে। সাড়ে ১৪ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে স্কাইডাইভিংয়ের জন্য ঝাঁপ দিয়েছিলেন মুরে। তবে সময়মতো খোলেনি দুটি প্যারাসুটই। ৮০ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে তিনি আছড়ে পড়েন মাটিতে। বেশ কিছু হাড় ভেঙে যাওয়া তো বটেই, যে পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয় তাঁর তাতে বেঁচে থাকা অসম্ভব। তবে জোনের প্রাণ বাঁচায় পিঁপড়েরা। বিষাক্ত ফায়ার অ্যান্টের ঢিপির ওপর পড়ায় প্রায় ২০০টি কামড় বসায় এই ছোট্ট প্রাণীগুলি। বিষের প্রতিক্রিয়ায় হৃদস্পন্দনকে চালিয়ে রেখেছিল বলে জানান চিকিৎসকরা। প্রায় ছ’সপ্তাহ হাসপাতালে কাটানোর পর অবশেষে সুস্থতায় ফেরেন জোন মুরে।

১০/১১

ক্যারিনা চিকিটোভা— এই ঘটনা ২০১৪ সালের। ক্যারিনার বয়স তখন মাত্র ৩ বছর। লুকিয়ে বাবার পিছু করতে করতেই সাইবেরিয়ার ঘন জঙ্গলে ঢুকে পড়ে ক্যারিনা। তবে সঙ্গী হিসাবে ছিল পোষ্য সারমেয় নাইডা। দিন গড়িয়ে সন্ধে নামতেই বাড়িতে নেমে আসে চিন্তার ছায়া। পুলিশেও খবর দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঘন জঙ্গলে কীভাবে খোঁজা যাবে তাকে? ১১দিন ‘মিসিং’ থাকার পর বাড়ি ফিরে আসে ক্যারিনা। বন্য জন্তুদের থেকে রক্ষা করে, বাড়ির রাস্তা চিনিয়ে ক্যারিনাকে ফিরিয়ে এনেছিল নাইডাই। মাঝের দিনগুলো বন্য স্ট্রবেরি আর নদীর জল খেয়েই কাটিয়েছিল সাইবেরিয়ান শিশুটি।

১১/১১

টিম ল্যাঞ্চেস্টার— জুন ১০, ১৯৯০। বার্মিংহাম বিমানবন্দর থেকে উড়ান নেওয়ার আগে পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক ছিল। তবে গণ্ডগোল বাঁধে মাঝপথে। হঠাৎই ডিকম্প্রেশন বিস্ফোরণের কারণে উড়ে যায় ককপিটের সামনে উইন্ডশিল্ডের একাংশ। সিটবেল্ট না লাগিয়ে রাখার কারণে বিমান থেকে হাওয়ার চাপে টিম বেরিয়ে যান বাইরে। তবে দ্বিতীয় পাইলট ধরে রেখেছিলেন তাঁর পা। এমন জীবনরক্ষা ঠিক যেন দৈবিকই। প্রায় ২০ মিনিট ধরে বিমানের বাইরে আছাড় খান টিম। ফুসফুসে হাওয়া ঢুকে যাওয়া ছাড়াও, ভেঙেছিল অসংখ্যা হাড়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল চোখও। ৬ মাস হাসপাতালে থাকার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তিনি।

Powered by Froala Editor