গোটা গ্রাম সেজে আছে নানা রঙের আলপনায়, বাড়ির দেওয়ালই যেন জ্বলন্ত ক্যানভাস!

আপাতভাবে, আর পাঁচটা বাংলার গ্রামের মতোই সাধারণ। মাটির বাড়ি, মাটির মানুষ, সবুজ— সব সেই একই রকম। সত্যিই কি তাই? গ্রামে একবার ঢুকলেই একটা অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়বে আপনার। আর সেই দৃশ্যই অন্যান্য অংশের সঙ্গে একে স্বতন্ত্র করেছে। সমস্ত বাড়ির দেওয়াল সেজে উঠেছে হরেক রকম আলপনায়। যেমন তার বাহার, তেমনই তার রং, তেমনই কারুকাজ। বলা ভালো, গোটা গ্রামটাই একটা ক্যানভাস হয়ে উঠে এসেছে। গ্রামের নাম টিকইল। কিন্তু এই নামে কেউ আর তাকে মনে রাখেনি। তার পরিচয় এখন ‘আলপনা গ্রাম’ নামে…

বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামটি। বেশিরভাগ বাড়িই মাটির। সহজ সাধারণ জীবনযাপন তাঁদের। আর শখ বলতে এই আলপনা। বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে যে জিনিসটা জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। তবে আমাদের ক্ষেত্রে যেটা পূজা-পার্বণে ঘর সাজানোর জিনিস, সেটাই এখানে শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে। বিশেষ উৎসবে নয়, সবসময়ই নানা রকম নকশায় সেজে থাকে এই গ্রামের বাড়িগুলি। মাটির দেওয়ালে জেগে ওঠে প্রাণ। তবে এই প্রথা কিন্তু আজকের নয়। বহু পুরনো সময় থেকেই এখানে এমন রীতি চলে আসছে। প্রতিবছর নববর্ষের দিন নতুন করে সেজে ওঠে বাড়ির দেওয়াল। বাইরের কোনো অনুপ্রাণিত চিত্র নয়; নিজেদের জীবনের নানা ছাপই এখানে ফুটে ওঠে। যাতে ধরা থাকে গ্রাম-বাংলার আবহমান সভ্যতার ধারা। এক সময় কেবল নকশা আঁকা হত। এখন আলপনার মতো করে ছবিও আঁকা হয়। ঠিক যেন ক্যানভাসের গায়ে আঙুল বুলিয়ে গেছেন কোনো এক জাদুশিল্পী! 

এই গ্রামের কেউই প্রথাগত আঁকা শেখেননি। বংশানুক্রমে নিজের গ্রাম সাজিয়ে আসছেন এভাবেই। আর সবই ভেষজ রং। অবশ্য এসবের পাশে আরও একটা পরিচয় আছে টিকইলের। তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ইলা মিত্রের সঙ্গে গভীর যোগ ছিল এই গ্রামের। আজ অবশ্য নিজের পরিচিতিতেই উজ্জ্বল টিকইল। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ স্রেফ বাড়িগুলোকে দেখতেই আসেন। শুধু বাংলাদেশের নয়; এপার বাংলা এমনকি বিদেশ থেকেও মানুষরা আসেন, আর মুগ্ধ হন। কেউ হয়ত মনে মনে বলেও ওঠেন, “ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত”। 

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পড়ুয়াদের কাছে নেই ফোন, গোটা গ্রামে স্পিকার লাগিয়ে পড়ানো শুরু শিক্ষকের