লকডাউনে বিনোদনের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে ডিজিটাল থিয়েটার

২০২০ সাল আমাদের এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ইতিহাসে এমন ভয়ঙ্কর অতিমারী ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। কিন্তু ক্রমশ বাড়তে থাকা হতাশার মধ্যেই নতুন করে রাস্তা খুঁজে নিয়েছে মানুষের সৃষ্টিশীলতা। আর তার সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ বোধহয় ডিজিটাল থিয়েটারের জনপ্রিয়তা। যে নাটকের ধারা একসময় মঞ্চের চার দেয়ালের বাইরে প্রকাশ্য রাস্তায় নিয়ে আসতে রীতিমতো আন্দোলন গড়ে উঠেছিল প্যারিস, কলকাতা বা দিল্লির বুকে; তাকেই আজ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন শিল্পীরা।

শুধুই কি নাটকের মাধ্যম বদলেছে? ভারতের ক্ষেত্রে ডিজিটাল থিয়েটার বেশ নতুন ধারণা হলেও পৃথিবীর নানা দেশে এর জনপ্রিয়তা আগেও ছিল। তবে লকডাউনের সময় বদলেছে সেই নাটকের গল্পও। আর তার পিছনে নানাভাবে কাজ করেছে সমসাময়িক পরিস্থিতি। নাটক তো একক কোনো শিল্পীর শিল্পকর্ম নয়। এর পিছনে থাকে অসংখ্য মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। অথচ লকডাউন সবার মধ্যেই দূরত্ব বাড়িয়ে তুলেছে। প্রতিটা গল্প হয়ে উঠছে একক মনের গল্প। একাকিত্বের গল্প। আবার তার মধ্যেই নানা মানুষকে জুড়ে নেওয়ার বার্তাও থাকছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া মানুষদের নিয়েই গড়ে উঠছে গল্প। তাদের একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে ভিডিও কনফারেন্সের স্ক্রিনে। ডিজিটাল থিয়েটারের পর্দায় উঠে আসছে ডিজিটাল জীবনের ছবি।

চ্যালেঞ্জটা বেশ কঠিন। নির্দেশকের সঙ্গে কলাকুশলীদের দূরত্ব হয়তো কয়েক’শ কিলোমিটার। সেই দূরত্ব অতিক্রম করতে হচ্ছে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই। আবার রিহার্সাল চলছে আলাদা আলাদা ভাবেই। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নাটক ক্যামেরা মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেনি কখনও। তার উপস্থাপনা হয় সরাসরি দর্শকদের সামনে। তবে ডিজিটাল থিয়েটারের ক্ষেত্রে ক্যামেরার কথা মাথায় রাখতে হয়েছে। ক্যামেরার চোখে যতটুকু জায়গা ধরা সম্ভব, ততটুকুই শিল্পীর মঞ্চ। স্বাভাবিকভাবেই তার পরিধি কমে গিয়েছে অনেকটা। অনেকে তো আবার একে নাটক বলতে রাজিও নন। তাঁদের কথায়, এটি গল্প বলার একটি নতুন মাধ্যম। এর প্রণালী অন্যরকম। আর তাই অক্টোবর মাস থেকে যখন দেশের নানা প্রান্তে থিয়েটারগুলি দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হতে থাকে, তখন অনেকেই মঞ্চে ফেরার আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠেছিলেন। তবুও দর্শকদের মধ্যে যেন ডিজিটাল থিয়েটারই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর জন্য নির্দিষ্ট সময় নেই। প্রত্যেকে নিজেদের সময় মতো নাটক দেখতে পারবেন, তাও ঘরে বসেই। একুশ শতাব্দীর ব্যস্ত জীবনে হয়তো এই পরিবর্তনটা অনেক আগেই আসার ছিল। করোনা মহামারী সেই পরিবর্তনকেই অপরিহার্য করে তুলেছে শুধু।

Powered by Froala Editor