কাঁটাতারের বালাই নেই, শহরের বুকে এই রেখার দু’পাশেই সহাবস্থান দুটি দেশের

কত না বিচিত্র জায়গা ছড়িয়ে আছে আমাদের এই পৃথিবীতে। কত শহর-গ্রাম। অবশ্য প্রত্যেক শহর বা গ্রাম একেকটি দেশের নিয়ন্ত্রণে। কথাটা কি ঠিক হল? না, এই পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে, যা দুটি দেশের সীমান্তে অবস্থিত। তবে সেসব জায়গার অধিকাংশতেই কোনো মানুষ থাকে না। কিন্তু ব্যতিক্রমও আছে। ঠিক যেমন এই বার্লে শহর।

বার্লে শহরের রাস্তায় হাঁটতে গেলেই চোখে পড়বে পাশাপাশি অসংখ্য যোগ চিহ্ন দিয়ে আঁকা লম্বা রেখা। আর সেই রেখার একপাশে লেখা ইংরেজি 'বি' আর অন্য পাশে লেখা 'এন এল'। আসলে এই রেখা একটা সীমান্ত। বি, অর্থাৎ বেলজিয়াম। এবং এন এল অর্থাৎ নেদারল্যান্ড। পথচলতি মানুষকে এই রেখা মনে পড়িয়ে দেয়, একটি দেশ ছেড়ে আরেক দেশে পা রাখতে চলেছে সে।

অবশ্য বিষয়টা যতটা সহজ মনে হচ্ছে, তা নয় একেবারেই। কোথাও হয়তো দেখতে পাবেন একটা বাড়ির মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে এই রেখা। অর্থাৎ সেই বাড়ির খানিকটা বেলজিয়ামে, খানিকটা নেদারল্যান্ডে। আবার সেই বাড়িতে মানুষ বসবাসও করে। কিন্তু তাদের কোন দেশের নাগরিক হিসাবে ধরা হবে? সেকথা জানতে গেলে অবশ্য চোখ রাখতে হবে সরকারি কাগজে।

বার্লে শহর শুধু দুটি দেশের মধ্যেই নয়, এই শহরে আছে দুটি পৌরসভাও। তার মধ্যে একটি ডাচ আইনের অধীনে, অন্যটি বেলজিয়াম আইনের অধীনে। তবে সেই মানচিত্রও বেশ জটিল। এখানে বেলজিয়াম সরকারের সীমানাধীন এলাকাটি কিন্তু বেলজিয়ামের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটাই দূরে। আবার নেদারল্যান্ডের মাঝে খানিকটা জায়গা বেলজিয়ামের, তার মধ্যে আবারও খানিকটা নেদারল্যান্ডের। কেমন যেন একটা গোলকধাঁধার মতো শহর। আর তেমনই গোলকধাঁধার মতো শহরের মানুষের জীবন।

আরও পড়ুন
মৃত্যুর পরও ভারত-চিন সীমান্ত ‘পাহারা’ দেন হরভজন সিং, সতর্ক করেন সৈন্যদের!

তবে এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, হঠাৎ এই বিচিত্র শহর গড়ে উঠল কীভাবে? সে ইতিহাস আছে মধ্যযুগের ইতিহাসে। তখন গোটা শহরটাই ছিল বেলজিয়ামের অধীনে। আর সেই রাজত্ব চালাতেন কোনো এক ডিউক। তিনিই খানিকটা এলাকা এক ডাচ ব্যবসায়ীকে ইজারা দিয়েছিলেন। তবে শহরের খানিকটা তিনি নিজের অধিকারে রেখে দিয়েছিলেন। তারপরেই ক্রমশ রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে থাকে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে নেদারল্যান্ড। কিন্তু এই শহরের ভবিষ্যত কী হবে? সেটা অবশ্য একদিন ঠিক করা যায়নি। ১৯ শতক থেকে প্রায় ১০০ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে নানা চাপানউতোরের পর একটা সমঝোতা তৈরি হয়। আর সেই সমঝোতার পরেই রাস্তায় ওই বিশেষ সীমানা আঁকা হয়েছে। সেই থেকে এভাবেই চলে আসছে শহরের ব্যবস্থা। দুটি দেশের মাঝে এক বিচিত্র শহর বার্লে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মাত্র ৬ মাসে তৈরি আমেরিকার এই শহর, গোপনে চলত পারমাণবিক অস্ত্রের কাজ