খবরের কাগজ থেকেই জন্ম নেবে গাছ, পথ দেখাচ্ছে জাপান

প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ, এ-কথা অল্পবিস্তর সকলেরই জানা। আর সেই কারণেই প্লাস্টিকের বদলে ব্যাগ বা মোড়ক হিসাবে কাগজের ব্যবহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বহু দেশ। কিন্তু তাতেই কি পরিবেশ সমস্যার সমাধান? কাগজ উৎপাদনের জন্য প্রতিনিয়ত যে হাজার হাজার গাছ কাটা পড়ছে, সেই খবর কজনই বা রাখি আমরা? এই সমস্যার অভিনব সমাধান খুঁজে দিয়েছে জাপানের একটি সংস্থা। ব্যবহারের পর কাগজ মাটিতে রোপণ করলে, সেখানেই জন্ম নেবে গাছ। 

হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। এই আশ্চর্য উদ্ভাবনীর পিছনে রয়েছেন জাপানের পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানী মাইনিচি শিমবুনশা (Mainichi Shimbunsha)। ‘সবুজ সংবাদপত্র’-এর (Green Newspaper) উদ্ভাবক তিনিই। আজ নয়। ২০১৬ সালের ৪ মে, ‘গ্রিনারি ডে’-এর দিনই শুরু হয়েছিল তাঁর এই লড়াই। পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে একটি বিশেষ সংবাদপত্রের সম্পাদনা শুরু করেছিলেন তিনি। ‘দ্য মাইনিচি’-খ্যাত সেই সংবাদপত্রই ছাপা হয়েছিল এই বিশেষ কাগজে। যা শুধু ১০০ শতাংশ জৈববিয়োজনযোগ্যই নয়, বিভিন্ন ফুল গাছের দানা দিয়ে তৈরি হওয়ায় গাছের জন্ম দিতেও সক্ষম এই কাগজ। ফলে, ভুলবশত যত্রতত্র এই কাগজ ছড়িয়ে পড়লেও গাছ জন্ম নেবে সেখানে। তাছাড়াও ব্যবহারকারীরাও যত্ন সহকারে এই কাগজ ‘রোপণ’ করতে পারেন টবে।

সাধারণত, যে-কোনো ধরনের কাগজকেই পরিবেশবান্ধব বলে ধরে নিই আমরা। তবে খবরের কাগজ বা বই-এর ছাপা পৃষ্ঠা আদতেও তেমনটা নয়। ছাপার কালিতেই মিশে থাকে সীসা-সহ নানান ক্ষতিকর ধাতু। কাগজ বিয়োজিত হয়ে গেলেও, পরিবেশে মিশে এইসকল ধাতু মৃত্তিকা দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রেও জৈব কালি তৈরি করে চমক লাগিয়েছেন জাপানি উদ্ভাবক।

সাউদার্ন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা বলছে, প্রতি আমেরিকান নাগরিকের কাগজের চাহিদা মেটাতে গড়ে ৭টি গাছ কাঁটা হয় প্রতি বছরে। অর্থাৎ, শুধু আমেরিকাতেই কাগজ তৈরির জন্য কাটা পড়ে বছরে ২০০ কোটি গাছ। গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে, তা নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সেখানে দাঁড়িয়ে গ্রিন কাগজের ব্যবহার বদলে দিতে পারে এই পরিস্থিতি। সম্পূর্ণভাবে পরিবেশের ক্ষতিপূরণ না হলেও, কাগজ থেকে নতুন করে গাছ জন্মালে অনেকটাই সারবে পরিবেশের ক্ষত। 

শুধু জাপানই নয়, ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ‘দ্য মাইনিচি’ সংবাদপত্রটি। বিশ্বজুড়ে তার বিক্রি প্রায় ৪৬ লক্ষ। বছরে আয় ৮ কোটি ইয়েন। তবে লাভ কম হলেও, প্রকৃতিতে সারিয়ে তোলার দায়িত্ব নিতে পেরেই খুশি জাপানের উদ্ভাবক…

Powered by Froala Editor

More From Author See More