বিশ্বযুদ্ধের অদ্ভুত ঘটনা; একটি সামান্য ‘টয়লেট’ ধরিয়ে দিল জার্মান সাবমেরিনকে!

প্রত্যেকের বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করা জরুরি— দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে ভারত সরকারের অন্যতম প্রকল্প এটি। এমনকি, এই বিষয় নিয়ে একটি সিনেমাও তৈরি হয়ে গেল। টয়লেট বা শৌচাগার থাকা অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যকর বিষয়। কিন্তু সেই টয়লেটই যদি দুর্ঘটনার কারণ হয়! কীরকম দুর্ঘটনা? ধরুন, একটা আস্ত জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়া!… 

কল্পকথা নয়; সত্যি সত্যিই এমনটা দেখেছিল পৃথিবী। স্রেফ একটি টয়লেটের জন্য ডুবে গিয়েছিল বিশাল একটি সাবমেরিন। ঘটে গিয়েছিল দুর্ঘটনা। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। যদিও যুদ্ধের তেজ একটু একটু করে কমে আসছিল; কিন্তু তখনও শেষ হয়নি। এমন সময়ই জার্মানি তৈরি করল একটি বিশেষ সাবমেরিন। নাম ‘ইউ-১২০৬’। যুদ্ধের শেষ দশা, তাও একটু চেষ্টা করা যাক… 

এই ‘ইউ-১২০৬’-এই বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি আনা হয়েছিল। আর তার মধ্যেই ছিল একটি বিশেষ টয়লেট। পোশাকি নাম ‘ডিপওয়াটার হাই-প্রেশার টয়লেট’। সমুদ্রের গভীরের অবস্থা তো আমাদের স্থলভাগের মতো নয়। তার ওপর সাবমেরিন। সেখানে তো আরও জটিল অবস্থা। হাই-প্রেশার টয়লেটের উৎপত্তি সেজন্যই। দীর্ঘদিন সাবমেরিনে থাকতে গেলে সমস্ত ব্যবস্থাই করে রাখতে হবে। তাই প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক এই টয়লেট বানিয়েছিলেন বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়াররা।

আমাদের বাড়ির সাধারণ টয়লেটের মতো দেখতে হলেও, এটি সেভাবে কাজ করত না। শুধুমাত্র এই টয়লেট ব্যবহারের জন্যই বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হত। তার যথেষ্ট কারণও ছিল। সেজন্যই নাম ‘হাই-প্রেশার টয়লেট’। যাই হোক, এতকিছু নিয়ে ইউ-১২০৬ পাড়ি দিল মহাসমুদ্রে। সালটা ১৯৪৫, ৬ এপ্রিল… 

ঠিক আটদিন পরের ঘটনা। জার্মানি প্রায় কোণঠাসা হয়ে গেছে। আমেরিকা-ব্রিটেন-রাশিয়ার ত্রিফলা আক্রমণ আরও বেড়ে গেছে। তাও যতদূর প্রতিরোধ করা যায় আর কি! স্কটল্যান্ড থেকে ১৫ কিমি দূরে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ ফুট নিচে অবস্থান করছে ইউ-১২০৬। এমন সময় ঘটল দুর্ঘটনা। সাবমেরিনের ভেতরেই কেউ একজন টয়লেটে গিয়েছিলেন, এবং নিয়ম মেনে ফ্লাশ করেননি। ব্যস, হুড়মুড় করে সমুদ্রের জল সেই টয়লেট দিয়ে সাবমেরিনের ভেতর ঢুকতে থাকে। চাপের তারতম্যের কারণেই এই দুর্ঘটনা। জল আটকানোর কোনো হদিশ পেলেন না জার্মানরা। 

সেইসঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে হাজির হল আরও একটি ঘটনা। সাবমেরিনের বাথরুমের ঠিক নিচেই ছিল ব্যাটারি চেম্বার। যা ছিল পুরো সাবমেরিনের চালিকাশক্তি। ওই টয়লেট দিয়ে সমুদ্রের জল যখনই ঢুকতে শুরু করল, তখনই সেটা চলে গেল ব্যাটারি চেম্বারের দিকে। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল বিক্রিয়া। একে সাবমেরিন ভেসে যাচ্ছে জলে, ক্রমশ বাড়ছে তার পরিমাণ; সেইসঙ্গে ব্যাটারিতে সমুদ্রের জল ঢুকে গিয়ে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাস। গোটা সাবমেরিন ছেয়ে যাচ্ছে সেই গ্যাসে। এবার উপায়? এভাবে তো বেঘোরে সবার প্রাণটি যাবে! 

আরও পড়ুন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ম্যাজিক করেই জার্মানদের হারিয়েছিলেন জ্যাস্পার, আজও গোপন সেই কৌশল

আর উপায় না দেখে সাবমেরিনের কমান্ডিং অফিসার আদেশ দিলেন, ইউ-১২০৬’কে ওপরে নিয়ে যাওয়া হোক। যা হয় দেখা যাবে। জলের ওপরে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এল গুলি। একেবারে কাছেই ব্রিটিশ নৌবাহিনী। জার্মানির সাবমেরিনকে চিনে নিয়েছে তাঁরা; এ তো আরও বিপদ! বাধ্য হয়ে নিচে নিয়ে যাওয়া হল আবার। ইতিমধ্যেই চারজন মারা গেছেন। কোনক্রমে টিকে যাওয়ার পর আবার ব্রিটিশ নৌবাহিনীর খপ্পরে পড়েন তাঁরা। তখন আর শক্তি নেই কারোর। বাধ্য হয়ে গ্রেফতার হতে হল সবাইকে। ভাবুন একবার, টয়লেট যদি ঠিকঠাক ব্যবহার করা হত, তাহলে কি আরও কিছু অধ্যায় যোগ হত ইতিহাসে! 

Powered by Froala Editor