জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে ভারতের একমাত্র সেনানী, শতবর্ষ ছুঁলেন কর্নেল পৃথীপাল

জলে, স্থলে এবং আকাশে; সর্বত্রই যুদ্ধ করেছেন তিনি। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এখনও অবধি তিনি অদ্বিতীয়। আর কোনো যোদ্ধাই তিনটি বাহিনীতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। ১১ ডিসেম্বর, শুক্রবার, সেই কিংবদন্তি মানুষটিই পা দিলেন ১০০ বছরে। আবারও একটি মাইলফলক গড়লেন কর্নেল পৃথীপাল সিং গিল।

১৯৪২ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দিয়েছিলেন ২২ বছরের পৃথীপাল। ছোটো থেকেই বাবাকে দেখতেন আকাশের বুকে উড়ে বেড়াতে। শুনতেন নানা ধরণের অভিজ্ঞতার কথা। তবে বায়ুসেনায় আর বেশিদিন থাকা হল না। পৃথীপাল সিং-এর বাবা নিজে সেনাবাহিনীতে থাকলেও ছেলের বিষয়ে একটু বেশিই যত্নবান ছিলেন। বায়ুসেনায় জীবনের ঝুঁকি বেশি। অতএব বছর খানেকের মধ্যেই চাকরি ছেড়ে ঢুকতে হল নৌবাহিনীতে। প্রথমে অবশ্য সমুদ্র পরিষ্কার করার কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত নৌবাহিনীতেই ছিলেন পৃথীপাল সিং। এর মধ্যে নৌবিদ্রোহ দেখেছেন। দেখেছন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও। যুদ্ধের সময় মুম্বই থেকে পারস্যগামী জাহাজ আইএনএস তীরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

১৯৪৮ সালে স্বাধীন ভারতের সেনাবাহিনী নতুন করে পুনর্গঠিত হল। এবার নৌবাহিনী ছেড়ে স্থলবাহিনীতে যোগ দিলেন পৃথীপাল। যোগ দিলেন আর্টিলারি বিভাগে। প্রথমে জম্মু-কাশ্মীরের দায়িত্বে। তারপর পাঞ্জাব। তখন সবে ভারত-পাক সীমান্ত সমস্যা দানা বাঁধছে। ১৯৬৫ সালে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়, তখন লাহোর সীমান্তের দায়িত্বে ছিলেন পৃথীপাল সিং। এই সময় লেফট্যানেন্ট পদ থেকে কমান্ডিং অফিসার পদে তাঁর নাম সুপারিশ করা হয়। পরবর্তী ৫ বছর উত্তর-পূর্বের নানা রাজ্যে কাজ করেছেন। সাধারণ সেনা থেকে ধাপে ধাপে কর্নেল পদে উত্তীর্ণ হলেন। ১৯৭০ সালে মণিপুরের কাছে উরখুল শহরে থাকাকালিন আসাম রাইফেলের কমান্ডিং অফিসার পদ থেকে অবসর নিলেন তিনি।

অবসরের পর চণ্ডীগড়ে বসবাস। শুক্রবার সেখানেই অনুষ্ঠিত হল প্রাক্তন সেনানীর শতবার্ষিকী। তবে তাঁর এই দীর্ঘ জীবনের রহস্য তিনি ফাঁস করেননি। তবে পরিবারের কথা থেকে বোঝা যায়, বার্ধক্যজনিত কোনো অবসাদ তাঁর মধ্যে কখনো বাসা বাঁধেনি। অবসরের পর থেকে টেনিস, স্কোয়াস এবং হকি নিয়েই মেতে থাকেন পৃথীপাল সিং। আর সুযোগ পেলেই এখনও মাঝে মাঝে কাঁধে বন্দুক ঝুলিয়ে শিকারে বেরিয়ে পড়েন। শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে যেন সম্পূর্ণ হল একটি বৃত্তই...

Powered by Froala Editor