জো বাইডেনের পূর্বপুরুষ থাকতেন ভারতে; মুম্বাই-এ এখনও রয়েছে তাঁর পরিবার!

১৯৭২ সাল। বাইডেনের বয়স তখন মাত্র ২৯ বছর। সদ্য নির্বাচিত হয়েছেন সিনেটর পদে। যুক্তরাষ্ট্রের কনিষ্ঠতম সিনেট সদস্য। এমনই সময় তাঁর কাছে শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে পৌঁছাল একটি চিঠি। ঠিকানা দেখেই চমকে উঠলেন বাইডেন। এসেছে আমেরিকার একেবারের উল্টোদিকের মুম্বাই শহর থেকে। ভারতের বাণিজ্য নগরী। কিন্তু কে পাঠিয়েছে এই চিঠি সুদূর মুম্বাই থেকে?

তবে আরও বড়ো চমক অপেক্ষা করে ছিল জো বাইডেনের জন্য। চিঠি খুলতেই অবাক হয়ে গেলেন বাইডেন। চিঠির প্রেরকের পদবিও যে ‘বাইডেন’-ই! ভেতরে লেখা রয়েছে “বাইডেন ফ্রম মুম্বাই”, “আমরা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত।” তবে কি অজান্তেই পরিবারের একাংশ সংসারযাপন করছে এশিয়ার এই দেশে? উত্তর খুঁজতে ভারতে আসবেন বলে ঠিক করেছিলেন বাইডেন। তবে প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব আর ব্যক্তিগত জীবন সামলে এসে ওঠা হয়নি তৃতীয় বিশ্বের এই দেশে।

এরপর পেরিয়ে গেছে বেশ কিছু বছর। প্রায় চার দশক পরে মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে ২০১৩ সালে ভাষণ দিতে আসেন জো বাইডেন। তৎকালীন মার্কিন উপ-রাষ্ট্রপতি তিনি। সেটাই তাঁর প্রথম ভারতবর্ষ সফর। না, ধরাবাঁধা স্ক্রিপ্টের মধ্যে আটকে রাখতে পারেননি তিনি নিজের বক্তৃতাকে। কথা বলতে বলতেই গল্পের ছলে স্মৃতিচারণ করে ফেলেন তিনি। প্রসঙ্গক্রমে উঠে আসে কয়েক দশক পুরনো সেই ঘটনার কথা। 

তবে বাইডেনের মুখ থেকে সেই বর্ণনা শুনেই হাসিতে ফেটে পড়েছিলেন মুম্বাইয়ের শ্রোতারা। কিন্তু সেই ঘটনা যে একেবারেই মিথ্যে নয়। বছর দুয়েক পর ওয়াশিংটন ডিসি’র একটি সভায় বাইডেন আরও একবার উল্লেখ করেছিলেন সেই ঘটনার কথা। ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ভারত-মার্কিন বিজনেস কাউন্সিলের সম্মেলন ছিল সেটা।

তবে ততদিনে তাঁর পারিবারিক পুঁথি খুঁজে দেখা হয়ে গেছে। বহুবছর আগে, অষ্টাদশ শতকে তাঁর এক পূর্বপুরুষ পাড়ি দিয়েছিলেন ভারতে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন ক্যাপ্টেন হিসাবে। তবে ব্রিটেন থেকে ভারতে পাড়ি দিলেও তিনি আর ফিরে আসেননি যুক্তরাজ্যে। বরং ভারতীয় কোনো মহিলাকেই বিয়ে করে সংসার গুছিয়েছেন তৃতীয় বিশ্বের এই দেশে। 

এই রহস্যের সমাধান হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। পরদিনই এক সাংবাদিকের সৌজন্য মিলেছিল মুম্বাইয়ের পাঁচ বাইডেন সদস্যের নাম। ১৩৫ কোটির ভারতে সম্ভবত একমাত্র বাইডেন পরিবার সেটিই। তবে ভারতের বাইডেন পরিবারের ব্যাপারে খোঁজ পেলেও যোগাযোগ করে হয়ে ওঠা হয়নি তাঁর এখনও। সত্তরোর্ধ্ব বয়সে এসেও সেই আশাকে জিইয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। 

আরও পড়ুন
মাত্র একদিনের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন যে ব্যক্তি

কিন্তু ভারতের এই বাইডেন পরিবারের অস্তিত্ব রয়েছে ঠিক কোথায়? কীভাবেই বা তাঁরা টিকে রয়েছেন এত বছর ধরে? জানা গেছে, গত ৫০ বছর ধরে মহারাষ্ট্রের নাসিকেই বসবাস এই বাইডেন পরিবারের। আর সদ্য সিনেটের পদে নিযুক্ত হওয়া বাইডেনকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন লেসলি বাইডেন নামের এক ব্যক্তি। যিনি ১৯৮৩ সালেই প্রয়াত হন নাসিকে। 

ব্রিটিশ-বংশজাত লেসলি’র বাবা চার্লস হোরাসিও বাইডেন ছিলেন একজন ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার। ব্রিটিশ ভারতে শুরু করেছিলেন ফটোগ্রাফির ব্যবসা। দেশ স্বাধীনের পর লেসসি’র আরেক ভাই আর্থার বাইডেন ফিরে গিয়েছিলেন ব্রিটেনে। তবে ভারতেই থেকে যান লেসলি। পরবর্তীতে গোয়ার এক পর্তুগিজ মহিলাকে বিবাহ করেন তিনি। ছয় সন্তানকে নিয়েই তিনি সংসার স্থাপন করেন নাসিকে। লেসলি’র তিন সন্তানও সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। তবে চার নাতি-নাতনিই এখন টিকিয়ে রেখেছেন ভারতে বাইডেন পরিবারের অস্তিত্ব। নাসিক শহরেই বিভিন্ন কাজের সঙ্গেই যুক্ত তাঁরা।

লেসলি’র পৌত্র আয়ান বাইডেন বছর কয়েক আগে সংবাদপত্র ‘মুম্বাই মিরর’-কে জানিয়েছিলেন, দাদুর পাঠানো চিঠি তিনি চোখে দেখেননি কোনোদিন। তবে ১৯৮১ সালে এসে পৌঁছানো জো বাইডেনের চিঠি চাক্ষুষ করেছেন তিনি। সেই চিঠি সংরক্ষিত না হলেও তার ছবি এখনও রয়েছে তাঁর কাছে। 

আরও পড়ুন
ম্যাজিক ফিগার ছোঁয়ার মুখে বাইডেন, জেনে নিন আমেরিকা নির্বাচনের খুঁটিনাটি

পৃথিবী যে আসলে একটা গোলক, কোথাও থেকে যাত্রা শুরু করলে সেই শুরুর জায়গাতেই ফিরে আসতে হয় আবার। তারই যেন এক উদাহরণ বাইডেনের এই ঘটনা। ওয়াশিংটন ডিসিতে বছর তিনেক আগে এক সম্মেলনে বাইডেন স্বয়ং উল্লেখ করেছিলেন এই কথা। জানিয়েছিলেন এতদিন না পৌঁছাতে পারলেও, অনুসরণ করে শিকড়ের কাছে পৌঁছবেন তিনি ঠিকই কোনো না কোনোদিন। সেইসঙ্গেই তার কথায় উঠে এসেছিল, বিশ্বের দুই বৃহত্তম গণতন্ত্রের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে এমনই অনেক অনেক অজানা সম্পর্ক। মার্কিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেলে সেইসব হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কদেরই খুঁজে পেতে চান বাইডেন। গড়ে তুলতে চান ভারতের সঙ্গে এক বন্ধুত্বের আবেশ...

তথ্যঋণ –
When Joe Biden wrote to the Bidens of Mumbai, Vallabh Ozarkar, Mumbai Mirror 

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
নিছক বিমান দুর্ঘটনা নয়; বিজ্ঞানী হোমি ভাবা-র ‘হত্যা’য় হাত ছিল আমেরিকার?

More From Author See More