কমছে পাঠকের সংখ্যা, বাড়ি-বাড়ি বই পৌঁছে দেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কাঁধের ব্যাগে, হাতে উঁকি দিচ্ছে রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, বিনয়। বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে বই এগিয়ে দিচ্ছেন পাঠককে। কখনও ফেরত নিচ্ছেন পুরনো বই। তারপর ফুটপাত শাসন করে বেছে নিচ্ছেন বড় রাস্তার মোড়।

ওপরের বর্ণনাটি নীললোহিতের ভক্তদের কাছে হয়তো খুব লোভনীয় হবে। সত্যিই যদি এখন এরকমভাবে চলে আসতেন আমাদের সামনে! কিন্তু ওপরের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কোনও সাহিত্যিক নন। ইনি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের উপজেলা সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুনীল কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। সাহিত্যিক না হলেও, সুনীলবাবু আদ্যপান্ত একজন বইপোকা। আর সেই নেশার জন্য বাড়িতেই তৈরি করেছেন একটি আস্ত লাইব্রেরি, নাম ‘চন্দ্রিকা জ্ঞান পাঠাগার’। ছোট্ট বাড়িতে ৬ হাজারেরও বেশি বই রেখেছেন তিনি। কিন্তু সমস্যা একটাই। একবিংশ শতাব্দীর ব্যস্ত পৃথিবীতে কারোরই যে বই পড়ার সময় নেই! তাই পাঠাগারে লোক সমাগমও কম। আর্থিক সংকটও একটা অন্যতম বড় কারণ।

কিন্তু সারাজীবন সাধারণের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া যার ব্রত, তিনি অত সহজে থামবেন কেন? সেই শুরু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পথে বেরনো। নিজের লাইব্রেরির যাবতীয় বইয়ের তালিকা তৈরি করে পাঠকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ান তিনি। বই পছন্দ হলে, সেই বই পৌঁছে দেন পাঠকের বাড়ি। পড়া শেষ হলে সময়মত নিয়েও আসেন তা। বিনিময়ে কোনও টাকা নেন না তিনি। যদিও কেউ ভালবেসে দেন, তবে সেটা জমিয়ে আরও নতুন নতুন বই কেনেন লাইব্রেরির জন্য। পাঠাগারটিই তাঁর স্বপ্ন এখন। এক সুনীল বাংলা সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, আর একজন প্রতিটা মুহূর্তে লড়াই করে যাচ্ছেন বইয়ের জন্য। লড়াই তাঁর পাঠাগারটির জন্য, যাতে আরও মানুষ আসেন, আরও বই বাড়ে, পাঠকের বৃত্তটা যাতে আরও ছড়িয়ে যায় দিক দিগন্তে।