এবারের টি-২০ বিশ্বকাপে নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে এল যে-সব দেশ

/৯

ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ— আজ থেকে বছর পনেরো আগে পর্যন্তও ক্রিকেট বলতে মূলত আটটি দেশকেই চিনত গোটা বিশ্ব। ক্রিকেট বিশ্বকাপে জিম্বাবোয়ে কিংবা বার্মুডার মতো দেশ দৈবাৎ দেখা দিলেও, বাইশ গজে আঁচড় কাটতে পারেনি সেভাবে। তবে মাত্র দেড় দশকের মধ্যেই আমূল বদলে গেছে গোটা বিশ্বের ক্রিকেট পরিমণ্ডল। সামনের সারিতে উঠে এসেছে একাধিক দেশের নাম। আজ থেকেই শুরু হয়ে গেল টি২০ বিশ্বকাপের মহড়া। আন্তর্জাতিক এই টুর্নামেন্টে প্রথমবারের জন্য মাঠে নামছে বেশ কিছু দল। কিছুদল গ্রুপ পর্বে বিদায় নিলেও, জিইয়ে রাখল একরাশ সম্ভাবনা। দেখে নেওয়া যাক উদীয়মানদের সেই তালিকাই…

/৯

স্কটল্যান্ড— বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড এই প্রথম নয়। এর আগে ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০১৫-র বিশ্বকাপ এবং ২০০৭, ২০০৯ ও ২০১৬-র টি২০ বিশ্বকাপের মাঠে দেখা গিয়েছিল স্কটল্যান্ডকে। তবে পাঁচ বছর পরে টি২০ বিশ্বকাপে প্রত্যাবর্তন করা স্কটল্যান্ডের চেহারা আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন। গ্রুপ পর্বে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে হারিয়ে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে স্কটল্যান্ড। মূল পর্বে ভারত, পাকিস্তান কিংবা নিউজিল্যান্ডের মতো দেশের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেও তেমন কোনো অঘটন ঘটাতে পারে স্কটল্যান্ড, তা বলার অপেক্ষা থাকে না।

/৯

ওমান— মাত্র দু’দশক আগের কথা। ২০০০ সালে আইসিসি’র এফিলেশন পেয়েছিল ওমান। আন্তর্জাতিক ম্যাচে হাতেখড়ি ২০০২ সালে কাতারে আয়োজিত এসিসি ট্রফিতে। তবে সেই ট্রফিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল আরবের দেশটি। তবে সেখান থেকেই ক্রমশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে ওমান। এক ঝাঁক তরুণ তারকার কাঁধে ভর করে আন্তর্জাতিক টি২০ র্যাঙ্কিং-এ ২৯ থেকে উঠে এসেছে ১৭তম স্থানে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে বাংলাদেশকে শুধু অলআউটই নয়, বরং ১৫৬ রানের টার্গেটকে জোরালো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে নজর কেড়েছিল ওমান। মাত্র ১৬ রানে ব্যবধানে বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হয়েই সুপার ১২-এ খেলার সুযোগ হারায় আরবের ছোট্ট দেশটি।

/৯

নামিবিয়া— আফ্রিকায় ক্রিকেট বলতে দক্ষিণ আফ্রিকাকেই বুঝি আমরা। কিন্তু এবার এই মহাদেশ থেকেই উঠে এল আরও এক নতুন নাম। নামিবিয়া। হ্যাঁ, এবারের টি২০ বিশ্বকাপের সুপার ১২-এ প্রথমবারের জন্য জায়গা করে নিয়েছে আফ্রিকার দেশটি। ক্রিকেটের সঙ্গে নামিবিয়ার পরিচয় হয় অনেক পরে। বিশ শতকের শুরুতে। ১৯০৯ সাল সেটা। তখন দেশটি জার্মানির উপনিবেশ। সাহেবদের হাত ধরে ক্রিকেটের শুরু হলেও বিশ্বযুদ্ধের পরে থিতিয়ে পড়ে সেই রেশ। ১৯৬১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোগেই ফের শুরু হয় নামিবিয়ার ক্রিকেটচর্চা। ১৯৯২ সালে মেলে আইসিসি’র অ্যাসোসিয়েট সদস্যের সম্মান। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তালিকায় ১৬তম স্থান ধরে রাখা নামিবিয়া টি২০ বিশ্বকাপের বিশেষ আকর্ষণ তো বটেই।

/৯

পাপুয়া নিউ গিনি— ১৮৯০-এর দশক সেটা। পাপুয়া নিউ গিনির ওপর নজর পড়েছিল একাধিক ঔপনিবেশিক শক্তির। গোটা দ্বীপরাষ্ট্র জুড়ে গড়ে উঠেছিল অজস্র মিশনারি। ক্রিকেট সাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সেই সময়েই। কিন্তু বাঁধা-ধরা নিয়ম ছিল না কোনো। পরবর্তীটে অস্ট্রেলিয়া ক্ষমতায় আসার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ক্রিকেট খেলা। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে এই প্রথমবার খেলতে নামল পাপুয়া। গ্রুপ পর্বে ৩টি ম্যাচ হেরে বিদায় নিতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আগামীদিনে ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা জাগিয়ে রেখেছে বিশ্বের সবথেকে ভাষাগত বৈচিত্রময় দেশটি।

/৯

নেদারল্যান্ডস— নেদারল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাস বেশ পুরনো। উনিশ শতকের একেবারে শুরুর দিকে নেপোলিয়নিক যুদ্ধের সময় ক্রিকেটের প্রচলন শুরু হয় নেদারল্যান্ডসে। ১৮৮১ সালে তৈরি হয় প্রথম জাতীয় দল। তবে ডাচদের দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছাপিয়ে ক্রিকেট সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারেনি কোনোদিনই। ফলে অভাব থেকে গেছে পরিকাঠামোতেও। নয় নয় করে ৩টি বিশ্বকাপ এবং ৪টি টি২০ বিশ্বকাপে খেলে ফেলেছে ডাচেরা। এবারেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের। ফলাফল খুব একটা ইতিবাচক না হলেও, ক্রমশ যে বাইশ গজের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে নেদারল্যান্ডস, তা বোঝা যাচ্ছে বেশ ভালোভাবেই।

/৯

আয়ারল্যান্ড— নেদারল্যান্ডসের মতোই আয়ারল্যান্ডেও ক্রিকেট খেলা হয়ে আসছে ১৮৩০ সাল থেকে। আর তার পিছনে অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে ব্রিটিশদের। উনিশ শতকের শেষে ও বিশ শতকের শুরুতেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট খেলে বেড়াত জাতীয় আইরিশ দল। এমনকি ১৯০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়েছিল আইরিসরা। তারপর আয়ারল্যান্ড ক্রমশ হারিয়ে যায় ক্রিকেট দুনিয়া থেকে। ১৯৯৩ সালের পর পুনরায় আইসিসি’র অনুমোদন পায় ইউরোপের দেশটি। চলতি বছরে টি২০ বিশ্বকাপে মাত্র ২ পয়েন্টের জন্য সুপার ১২-এ জায়গা করে নিতে পারেনি আইরিসরা। তবে তাদের পারফর্মেন্স মন কেড়েছে দর্শকদের।

/৯

আফগানিস্তান— শেষ দু’দশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অতিপরিচিত নাম আফগানিস্তান। চোখ ধাঁধাঁনো ফর্মও ধরে রেখেছে আফগানরা। তা সত্ত্বেও এই তালিকায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার আফগানিস্তানের নাম। কারণ, ব্রিটিশ শাসকরা ১৮৩৯ সালে ক্রিকেটের সঙ্গে আফগানিস্তানের পরিচয় করালেও, তা হারিয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতার পর। ৯০-এর দশকে পুনরায় ক্রিকেটের ক্রেজ বাড়ে আফগানিস্তানে। তবে তালিবান ক্ষমতায় আসার পরই ১৯৯৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত খেলা ধুলা। ক্রিকেটও। যদিও ২০০০ সালে তালিবান বিদায় নেওয়ার ১ বছর আগে ক্রিকেট খেলার অনুমতি দেয় তারা।

/৯

বিগত মাস চারেক ধরেই বিশ্বজুড়ে চর্চার শীর্ষেই রয়েছে আফগানিস্তানের নাম। গত আগস্টেই ফের কাবুলের দখল নিয়েছে তালিবানরা। উগ্রবাদী গোষ্ঠীর রাজত্বে বিপর্যস্ত হয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অনেক খেলোয়াড়ের পরিবারও। কিন্তু তারপরেও টি২০ বিশ্বকাপে লড়াই করতে নামছে রশিদ খানের দল। এই লড়াই যেন মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নিজেদের প্রমাণ করারই লড়াই। জয় আসুক কিংবা না-ই আসুক, এই লড়াইটা দেখার মতো তো বটেই। সমর্থন করার মতোও…

Powered by Froala Editor