একুশ শতকেও শতাব্দীপ্রাচীন সংস্কৃতি আঁকড়ে রয়েছেন এই ওলন্দাজরা!

মাথায় কাপড়ের তৈরি জেন্টলম্যান ক্যাপ। গায়ে কালো পশমের ভারি সোয়েটার, গলায় লাল রিবন। ফুলপ্যান্ট পরলেও তার ঝুল গোড়ালির কয়েক ইঞ্চি উপরেই থেমে গেছে। সেখান দিয়েই দেখা যাচ্ছে কালো মোজা। মহিলাদের ক্ষেত্রে কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা সুদীর্ঘ অ্যাপ্রন। মাথায় কাপড়ের শৌখিন টুপি। ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ছবিতেই দেখা যায় এমন দৃশ্য। কিন্তু আজকের দিনে রাস্তাঘাটে হঠাৎ এমন পোশাক পরিহিত কাউকে দেখলে খানিক চমক লাগাই স্বাভাবিক। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন প্রযুক্তিতে বদল এসেছে, তেমনই বদলেছে মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদও। তবে নেদারল্যান্ডসের প্রান্তিক অঞ্চলে গেলে হঠাৎ করেই দেখা মিলবে এমন দৃশ্যের।

মিডেলবার্গ, ভ্লিসেনজেন, বেরজেন— হল্যান্ডের এইসকল উপকূলবর্তী অঞ্চলে যেন আজও সময় থমকে রয়েছে সেই অষ্টদশ কিংবা উনিশ শতকেই। প্রযুক্তির হাত ধরে টেলিভিশন, ফোন এসেছে ঠিকই। কিন্তু শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিতে বদল আসেনি বিন্দুমাত্র। বলতে গেলে তাঁরাই যেন বাঁচিয়ে রেখেছেন হল্যান্ডের (Neatherlands) আসল ইতিহাসকে। 

তবে দুঃখের বিষয়, হাতে গোনা কয়েকটিমাত্র পরিবারই ধরে রেখেছেন এই ঐতিহ্যকে। মূলত, তাঁরা সকলেই পেশায় মৎস্যজীবী। একটা সময় সমুদ্রভ্রমণ এবং নৌচালনায় সুবিধার জন্যই জন্ম নিয়েছিল এই বিশেষ পোশাকের। সেই থেকেই এই পোশাক যেন ইউনিফর্ম হয়ে গেছে তাঁদের। টি-শার্ট বা স্যুটের সংস্কৃতি আজও স্পর্শ করতে পারেনি এইসব ছোট্ট ছোট্ট জনপদগুলিকে। অবশ্য বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং উৎসবের সময় বদলে যায় এই পোশাক। কখনও চোখ পর্যন্ত ঢাকা বিশেষ রেশমের টুপি পরেন তাঁরা। কখনও আবার গায়ে চাপাতে দেখা যায় ঔপনিবেশিক আমলের সেনাধ্যক্ষের জ্যাকেট। 

তবে শুধুমাত্র পোশাকই নয়, আজও মৎস্যশিকারে সেই অষ্টাদশ-উনিশ শতকের প্রযুক্তির নৌকাই ব্যবহার করেন এই ছোট্ট সম্প্রদায়ের মানুষরা। বাড়িতেও ব্যবহার করেন প্রাচীন কায়দায় তৈরি মাটির পাত্র। সবমিলিয়ে এই জনপদে পৌঁছালে আক্ষরিক অর্থেই পিছিয়ে যাওয়া সম্ভব কয়েকশো বছর। 

দুঃখের বিষয়, এমন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং জীবন্ত ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না অধিকাংশ ডাচ নাগরিকই। বছর দুয়েক আগে হল্যান্ডের প্রাচীন পোশাক ও রীতি-রেওয়াজ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই এই সম্প্রদায়ের হদিশ পান ইন্দোভেনের নেদারল্যান্ডস অ্যাকাডেমি ভোর বিলডক্রিটির ছাত্র এজরা বোহম। এজরাই ক্যামেরাতেই ধরা পড়েছিল এই প্রাচীনত্বের ছোঁয়া। এজরার ‘আইডেনটিটি অফ হল্যান্ড’-খ্যাত এই সিরিজ এবার ছিনিয়ে নিল সম্মানজনক সোনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড। শুধু হল্যান্ডই নয়, ছবির মাধ্যমে গোটা বিশ্বেকে যেন নতুন করে এজরা পরিচয় করাচ্ছেন হল্যান্ডের ইতিহাসের সঙ্গে… 

Powered by Froala Editor

More From Author See More