জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে একা কুম্ভ এই সমাজকর্মী

গ্রামাঞ্চল কিংবা মফঃস্বল তো বটেই, কলকাতার বুকেও ফাঁকা এক ফালি জমি পড়ে থাকলেও সেখানে হঠাৎ করেই গড়ে উঠতে দেখা যায় কোনো মন্দির কিংবা ক্লাব। কোনো রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিসও। কখনও আবার অবৈধভাবেই জমির পরিসর বাড়িয়ে নেন প্রোমোটাররা। শুধু বাংলাই নয়, ভারতের অন্যত্রও দৃশ্যটা একই। কিন্তু এর কতটুকুই বা নজরে আসে প্রশাসনের? অথচ, প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও এই অনৈতিকতার (Land Mafias) বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন কোয়েম্বাটুরের (Coimbatore) সমাজকর্মী এসপি থিয়াগরাজন (SP Thiyagarajan)। 

আজ থেকে প্রায় ১৮ বছর আগের কথা। ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবেই শুরু হয়েছিল তাঁর এই লড়াই। তিন আবাসন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ তোলেন তাঁরই এক প্রতিবেশী। তবে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। সাহায্যের জন্য নিজেই এগিয়ে গিয়েছিলেন থিয়াগরাজন। নিজেই উদ্যোগ নিয়ে আরটিআই-এর আবেদন করেন তিনি। কাজ হয় তাতে। আদালতে ওঠে সেই মামলা। এমনকি জমির ওপর অবৈধ নির্মাণ বন্ধের আদেশও দেয় প্রশাসন। 

অনৈতিকতাকে সেবার তিনি রুখে দিয়েছিলেন ঠিকই। তবে এই ঘটনাই পরোক্ষভাবেও চোখে খুলে দেয় তাঁর। শুধু তাঁর প্রতিবেশীই নয়, ক্রমাগত জমি অধিগ্রহণের শিকার হচ্ছে সরকারের বরাদ্দ করা ওপেন স্পেস রিজার্ভ বা অনাবাদী জমিও। আশ্চর্যের ব্যাপার এই জমি কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি না হওয়ায়, কোনো অভিযোগও জমা পড়ে না প্রশাসনের কাছে। বিষয়টি নজরে আসার পর, অলিখিত ভাবে কোয়েম্বাটুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের হয়ে কাজ করা শুরু করেন থিয়াগরাজন। পড়ে থাকা জমিতে কোনো নতুন নির্মাণ কিংবা অধিগ্রহণের ঘটনা দেখলেই আরটিআই-এর মাধ্যমে তথ্য যাচাই করে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। বিগত ১৮ বছর ধরে এটাই তাঁর দৈনিক রুটিন। 

এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৬ একর দখলকৃত সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করেছেন কোয়েম্বাটুরের ৫০ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী। বর্তমান বাজারে যার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটিরও বেশি। তাছাড়াও কোয়েম্বাটুরের ১০০টি ওয়ার্ডে প্রায় পঞ্চাশাধিক ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারেও সাহায্য করেছেন থিয়াগরাজন। জয় এসেছে প্রায় ৪০টিতে। এখনও আদালতে মামলা চলছে আরও বেশ কয়েকটি অধিগ্রহণ সম্পর্কে। 

তবে এখানেই শুধু সীমাবদ্ধ নেই তাঁর কর্মকাণ্ড। সরকারি জমিকে অধিগ্রহণের হাত থেকে বাঁচানোর পর, নিজের খরচেই সেই জমির চারিদিকে বেড়া দেওয়ারও বন্দোবস্ত করেন প্রৌঢ় সমাজকর্মী। কখনও আবার স্থানীয় প্রশাসনের থেকে অনুমতি নিয়ে সেই জমিতে বৃক্ষরোপণ করে গড়ে তোলেন জনসাধারণের জন্য পার্ক। অবশ্য এই কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে অধিগ্রহণকারীদের হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে একাধিকবার। তবে অনৈতিকতার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে হারতে নারাজ তিনি…

Powered by Froala Editor